শীত নিয়ে কবিতা। শীতের সকালের সেরা কবিতা পড়ুন।

শীতকাল, ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশের অন্যতম মনোরম ঋতু। হেমন্তের শেষ স্পর্শে যখন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে পৃথিবী, তখনই শুরু হয় শীতের আগমন। ক্রমশ ঠান্ডা বাড়তে থাকে, পাতা ঝরা গাছের নগ্ন শাখায় বসে থাকে একাকীত্বের গান। শীতের রাত মানেই গল্পের আড্ডা। উনুনের আগুনের পাশে বসে, গরম কম্বলের আলিঙ্গনে, গল্প, কবিতা আর আড্ডায় কেটে যায় রাত। অনেক কবি এই শীত নিয়ে কবিতা লিখেছেন। কবিতায় তারা শীতের মুহূর্ত গুলো ফুটিয়ে তুলেছে।

শীতকাল মানেই কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর, রোদ পোহানোর অপেক্ষায় কাঁপা কাঁপা শরীর, গরম কম্বলের আলিঙ্গন। শীতের সকালে ঘন কুয়াশার ভেতর দিয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া, কুয়াশায় ভেজা রাস্তায় পায়ের আঁচড় এ সকল বিষয় কবিতা উল্লেখ করা হয়েছে। শীত নিয়ে বিভিন্ন কবিদের সেরা কবিতা গুলো দেওয়া হলো।

শীত নিয়ে কবিতা

বেশির ভাগ মানুষ শীতকাল কে ভালোবাসে। শীতকাল কেবল ঋতু নয়, এটি একটি অনুভূতি। ঠান্ডা বাতাসের স্পর্শে, কুয়াশার চাদরে ঢাকা পৃথিবীতে, গরম কাপড়ের আলিঙ্গনে, পিঠা-পায়েসের স্বাদে, উৎসবের আনন্দে – এই সব মিলিয়ে শীতকালকে করে তোলে অনন্য ও অসাধারণ। শীতকাল মানেই বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন। পৌষ সংক্রান্তি, নববর্ষ, ঈদ – কত উৎসবই না পালিত হয় এই ঋতুতে। নতুন জামাকাপড়, মিষ্টির আয়োজন, আত্মীয়স্বজনের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ – এই সব মিলিয়ে শীতের উৎসব হয় অতুলনীয়। শীত নিয়ে কবিতা গুলো পড়ে নিন।

কবিতা ১ঃ

কবিতাঃ শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা
কবিঃ ভাস্কর চক্রবর্তী

শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা আমি তিনমাস ঘুমিয়ে থাকব- প্রতি সন্ধ্যায়
কে যেন ইয়ার্কি করে ব্যাঙের রক্ত
ঢুকিয়ে দেয় আমার শরীরে- আমি চুপ করে বসে থাকি- অন্ধকারে
নীল ফানুস উড়িয়ে দেয় কারা, সারারাত বাজি পোড়ায়
হৈ-হল্লা- তারপর হঠাৎ
সব মোমবাতি ভোজবাজীর মত নিবে যায় একসঙ্গে- উৎসবের দিন
হাওয়ার মত ছুঁতে যায়, বাঁশির শব্দ

আর কানে আসে না- তখন জল দেখলেই লাফ দিতে ইচ্ছে করে আমার
মনে হয়- জলের ভেতর- শরীর ডুবিয়ে
মুখ উঁচু করে নিঃশ্বাস নিই সারাক্ষণ- ভালো লাগে না সুপর্ণা, আমি
মানুষের মত না, আলো না, স্বপ্ন না- পায়ের পাতা
আমার চওড়া হয়ে আসছে ক্রমশঃ- ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনলেই
বুক কাঁপে, তড়বড়ে নিঃশ্বাস ফেলি, ঘড়ির কাঁটা
আঙুল দিয়ে এগিয়ে দিই প্রতিদিন- আমার ভালো লাগে না- শীতকাল
কবে আসবে সুপর্ণা আমি তিনমাস ঘুমিয়ে থাকব

একবার ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই মেঘ ঝুঁকে থাকতে দেখেছিলাম
জানলার কাছে- চারদিক অন্ধকার
নিজের হাতের নখও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না সেদিন- সেইদিন
তোমার কথা মনে পড়তেই আমি কেঁদে ফেলেছিলাম- চুলে, দেশলাই জ্বালিয়ে
চুল পোড়ার গন্ধে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আবার-
এখন আমি মানুষের মত না- রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
হঠাৎ এখন লাফ দিতে ইচ্ছে করে আমার- ভালোবাসার কাছে, দীর্ঘ তিনমাস
আর মাথা নীচু করে বসে থাকতে ভালো লাগে না- আমি
মানুষের পায়ের শব্দ শুনলেই
তড়বড়ে নিঃশ্বাস ফেলি এখন- যে দিক দিয়ে আসি, সে দিকেই দৌড় দি
কেন এই দৌড়ে যাওয়া? আমার ভালো লাগে না
শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা আমি তিনমাস ঘুমিয়ে থাকব।

কবিতা ২ঃ

 শীতের শহরে প্রেম নেই
মুহতাসিম তকী

প্রিয়তমারা,
তোমাদের চোখের কাঁজলে কান্নার জল মেশে বলেই না
কবিতায় এতো বিষাদ।
এই শীতের শহরে এতো এতো বিরহ বিকেল!
চুম্বন বঞ্চিত ঠোঁট জানান দেয়
এই শহরে আর প্রেমিকা নেই কোনো।
আমাদের বুকে চিড় ধরে, ঠোঁটে চিড় ধরে
মনের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে চৈত্র মাসের মতোন।
একটা প্রেমিকা বিহীন শহর,
শীতের বিরাণ ভূমিতে
আমি আর কি লিখবো বলো!

তোমরা তো চলে যাও কেঁদে ফ্যালো মায়াবী হরিনীর মতোন।
আমাদের শালা বিড়ি টানা ছাড়া কিচ্ছু করার নাই।

আর কতোকাল বলো
আর কতো বিরহের কবিতায়
তোমাদের ফিরবার চিঠি পাঠালে
এই শহরে প্রেম ফিরে আসবে?

শীত নিয়ে রোমান্টিক কবিতা

শীতের রোমান্স

শীতের সকালে কুয়াশার চাদরে,
নীরবে এসে বসে তুমি আমার পাশে।
গরম কফির কাপে,
ভালোবাসার স্পর্শে,
মনটা হয়ে যায় আজ অদ্ভুত সুন্দর।

শীতের রোদে,
হলুদ পাতায় ঢাকা রাস্তায়,
হাতে হাত রেখে হাঁটি আমরা দুজনে।
ঠান্ডা বাতাসে,
গা ঘেঁষে বসে,
গল্পে গানে কেটে যায় দুপুরটা।

শীতের রাতে,
উনুনের আগুনের পাশে,
কম্বলের আলিঙ্গনে,
তোমার হাতে হাত রেখে,
ভালোবাসার কথা বলি আমরা।

শীতের শীতলতায়,
তোমার উষ্ণতা,
হৃদয় ছুঁয়ে যায় আমার।
শীতের রোমান্সে,
ভালোবাসা ফুটে ওঠে,
আমাদের প্রতিটি মুহূর্তে।

শীতের রোদে

শীতের রোদে,
হলুদ পাতায় ঢাকা রাস্তায়,
হাতে হাত রেখে হাঁটি আমরা দুজনে।
ঠান্ডা বাতাসে,
গা ঘেঁষে বসে,
গল্পে গানে কেটে যায় দুপুরটা।

তোমার চোখের জ্যোৎস্নায়,
হারিয়ে যাই আমি,
ভালোবাসার নদীতে,
ভেসে যাই আমরা দুজনে।

শীতের রোদে,
উষ্ণ আলিঙ্গনে,
ভালোবাসা ফুটে ওঠে,
আমাদের প্রতিটি মুহূর্তে।

শীত নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা

শীতের বিদায়
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

তুঙ্গ তোমার ধবলশৃঙ্গশিরে
উদাসীন শীত, যেতে চাও বুঝি ফিরে?

চিন্তা কি নাই সঁপিতে রাজ্যভার
নবীনের হাতে, চপল চিত্ত যার।

হেলায় যে-জন ফেলায় সকল তার
অমিত দানের বেগে?

দণ্ড তোমার তার হাতে বেণু হবে,
প্রতাপের দাপ মিলাবে গানের রবে,

শাসন ভুলিয়া মিলনের উৎসবে
জাগাবে, রহিবে জেগে।

সে যে মুছে দিবে তোমার আঘাতচিহ্ন,
কঠোর বাঁধন করিবে ছিন্ন ছিন্ন।

এতদিন তুমি বনের মজ্জামাঝে
বন্দী রেখেছ যৌবনে কোন্‌ কাজে,

ছাড়া পেয়ে আজ কত অপরূপ সাজে
বাহিরিবে ফুলে দলে।

তব আসনের সম্মুখে যার বাণী
আবদ্ধ ছিল বহুকাল ভয় মানি’

কণ্ঠ তাহার বাতাসেরে দিবে হানি’
বিচিত্র কোলাহলে।

তোমার নিয়মে বিবর্ণ ছিল সজ্জা,
নগ্ন তরুর শাখা পেত তাই লজ্জা।

তাহার আদেশে আজি নিখিলের বেশে
নীল পীত রাঙা নানা রঙ ফিরে এসে,

আকাশের আঁখি ডুবাইবে রসাবেশে
জাগাইবে মত্ততা।

সম্পদ তুমি যার যত নিলে হরি’
তার বহুগুণ ও যে দিতে চায় ভরি,

পল্লবে যার ক্ষতি ঘটেছিল ঝরি,
ফুল পাবে সেই লতা।

ক্ষয়ের দুঃখে দীক্ষা যাহারে দিলে,
সব দিকে যার বাহুল্য ঘুচাইলে,

প্রাচুর্যে তারি হল আজি অধিকার।
দক্ষিণবায়ু এই বলে বার বার,

বাঁধন-সিদ্ধ যে-জন তাহারি দ্বার
খুলিবে সকলখানে।

কঠিন করিয়া রচিলে পত্রখানি
রসভারে তাই হবে না তাহার হানি,

লুঠি লও ধন, মনে মনে এই জানি,
দৈন্য পুরিবে দানে।

ওগো শীত
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ওগো শীত, ওগো শুভ্র, হে তীব্র নির্মম,
তোমার উত্তরবায়ু দুরন্ত দুর্দম
অরণ্যের বক্ষ হানে। বনস্পতি যত
থর থর কম্পমান, শীর্ষ করি নত

আদেশ-নির্ঘোষ তব মানে। “জীর্ণতার
মোহবন্ধ ছিন্ন করো’ এ বাক্য তোমার
ফিরিছে প্রচার করি জয়ডঙ্কা তব
দিকে দিকে। কুঞ্জে কুঞ্জে মৃত্যুর বিপ্লব

করিছে বিকীর্ণ শীর্ণ পর্ণ রাশি রাশি
শূন্য নগ্ন করি শাখা, নিঃশেষে বিনাশি
অকাল-পুষ্পের দুঃসাহস।
হে নির্মল,

সংশয়-উদ্বিগ্ন চিত্তে পূর্ণ করো বল।
মৃত্যু-অঞ্জলিতে ভরো অমৃতের ধারা,
ভীষণের স্পর্শঘাতে করো শঙ্কাহারা,
শূন্য করি দাও মন; সর্বস্বান্ত ক্ষতি

অন্তরে ধরুক শান্ত উদাত্ত মুরতি,
হে বৈরাগী। অতীতের আবর্জনাভার,
সঞ্চিত লাঞ্ছনা গ্লানি শ্রান্তি ভ্রান্তি তার
সম্মার্জন করি দাও। বসন্তের কবি

শূন্যতার শুভ্র পত্রে পূর্ণতার ছবি
লেখে আসি’, সে-শূন্য তোমারি আয়োজন,
সেইমতো মোর চিত্তে পূর্ণের আসন
মুক্ত করো রুদ্র-হস্তে; কুজ্‌ঝটিকারাশি

রাখুক পুঞ্জিত করি প্রসন্নের হাসি।
বাজুক তোমার শঙ্খ মোর বক্ষতলে
নিঃশঙ্ক দুর্জয়। কঠোর উদগ্রবলে
দুর্বলেরে করো তিরস্কার; অট্টহাসে

নিষ্ঠুর ভাগ্যেরে পরিহাসো; হিমশ্বাসে
আরাম করুক ধূলিসাৎ। হে নির্মম,
গর্বহরা, সর্বনাশা, নমো নমো নমঃ।

শেষ কথা

শীত এটি একটি শুধু ঋতু নয়, নানা উৎসব আনন্দের প্রহর। শীতকাল সবাই উপভোগ করতে ভালোবাসে। বছরের নির্দিষ্ট একটা সময়ে শীত আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করতে আসে। তাই আমাদের কে কেবল তা অনুভব করতে হবে। একটা সময় শীত ও শীতের সকাল আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়। সাথে কেড়ে নেয় শীতের মুহূর্ত গুলো। তাই আমাদের কে সব সময় শীত কে উপভোগ করতে হবে। এখানে শীত নিয়ে কবিতা গুলো শেয়ার করেছি। আশা করছি এই কবিতা আপনাদের ভালোলেগেছে।

আরও দেখুনঃ

জীবনানন্দের শীতের কবিতা