জীবনানন্দের শীতের কবিতা – শীত নিয়ে সেরা কবিতা গুলো পড়ুন

শীত একটি ঋতু। প্রতি বছরে এক বার করে শীতের আগমন ঘটে। বাংলাদেশে ৬ ঋতুর মধ্যে একটি হচ্ছে শীত। সবার পছন্দের তালিকায় শীত কাল রয়ে যায়। শীত নিয়ে আসে এক মুঠো হাসি। আকাশে রোদের লুকোচুরি। শীতের সকালে সংগ্রহ করা খেজুরের রস, কুয়াশায় মোড়ানো চাদর সব কিছু শীতের জন্যই হয়ে থাকে। শীত কে অনেকে উপভোগ করে। এই শীত নিয়ে অনেক কবি কবিতা লিখেছেন। আজকে জীবনানন্দের শীতের কবিতা গুলো সংগ্রহ করেছি। কনকনে এই শীতে কবিতা গুলো পড়লে অনেকটা উপভোগ করতে পারবেন।

জীবনানন্দের শীতের কবিতা

মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া ও শীতের প্রকৃতি নিয়ে  জীবনানন্দের শীতের কবিতা আছে। এই কবিতা গুলো থেকে সেরা কয়েকটি কবিতা এই পোস্টে শেয়ার করেছি। যারা শীতের কবিতা পড়তে চান এখান থেকে পড়ে নিবেন।

শীত রাত
জীবনানন্দ দাশ

এই সব শীতের রাতে আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে;
বাইরে হয়তো শিশির ঝরছে, কিংবা পাতা,
কিংবা প্যাঁচার গান; সেও শিশিরের মতো, হলুদ পাতার মতো।

শহর ও গ্রামের দূর মোহনায় সিংহের হুঙ্কার শোনা যাচ্ছে –
সার্কাসের ব্যথিত সিংহের।

এদিকে কোকিল ডাকছে – পউষের মধ্য রাতে;
কোনো-একদিন বসন্ত আসবে ব’লে?
কোনো-একদিন বসন্ত ছিলো, তারই পিপাসিত প্রচার?
তুমি স্থবির কোকিল নও? কত কোকিলকে স্থবির হ’য়ে যেতে দেখেছি,
তারা কিশোর নয়,
কিশোরী নয় আর;
কোকিলের গান ব্যবহৃত হ’য়ে গেছে।

সিংহ হুঙ্কার ক’রে উঠছে:
সার্কাসের ব্যথিত সিংহ,
স্থবির সিংহ এক – আফিমের সিংহ – অন্ধ – অন্ধকার।
চারদিককার আবছায়া-সমুদ্রের ভিতর জীবনকে স্মরণ করতে গিয়ে
মৃত মাছের পুচ্ছের শৈবালে, অন্ধকার জলে, কুয়াশার পঞ্জরে হারিয়ে যায় সব।

সিংহ অরন্যকে পাবে না আর
পাবে না আর
পাবে না আর
কোকিলের গান
বিবর্ণ এঞ্জিনের মত খ’শে খ’শে
চুম্বক পাহাড়ে নিস্তব্ধ।
হে পৃথিবী,
হে বিপাশামদির নাগপাশ, – তুমি
পাশ ফিরে শোও,
কোনোদিন কিছু খুঁজে পাবে না আর।

শীতের রাতে 
জীবনানন্দ দাশ

গভীর শীতের রাত এই সব,- তবু
চারিদিকে যুবাদের হৃদয়ের
জীবনের কথা

মৃত্যুর উপর দিয়ে সাঁকোর মতন
চেয়ে দেখে মরণের
অপ্রমেয়তা

সেতুর ছবির মত মিলে গিয়ে
জলের ভিতরে
জীবনের জয়-
আর মরণের স্তব্ধতাকে অনুভব
করে।

অনুভব করে এই জীবনই মহৎ,
মরণের চেয়ে বড়
জীবনের সুর;
যদিও অন্ন আজ ভূমি নয়- তবুও
মৈত্রেয়ী

অন্নলোভাতুর;
হৃদয়বিহীনভাবে- দশ বিশ শত
কোটি টন

চলে আজ পঙ্গপাল,- নিজেকে
উজাড় করে;- জেনে
জীবন হতাশ নয় ব’লেই জীবন।

শীত শেষ
– জীবনানন্দ দাশ

আজ রাতে শেষ হ’য়ে গেল শীত- তারপর কে যে এলো মাঠে-মাঠে খড়ে
হাঁস গাভী শাদা-প্লেট আকাশের নীল পথে যেন মৃদু মেঘের মতন,
ধানের সোনার ছড়া নাই মাঠে- ইঁদুর তবুও আর যাবে নাকো ঘরে

তাহার রূপালি রোম একবার জ্যোৎস্নায় সচকিত ক’রে যায় মন,
হৃদয়ে আস্বাদ এলো ফড়িঙের- কীটেরও যে- ঘাস থেকে ঘাসে-ঘাসে তাই
নির্জন ব্যাঙের মুখে মাকড়ের জালে তারা বরং এ অধীর জীবন

ছেড়ে দেবে- তবু আজ জ্যোৎস্নায় সুখ ছাড়া সাধ ছাড়া আর কিছু নাই;
আছে নাকি আর কিছু? পাতা খড়কুটো দিয়ে যে-আগুন জ্বেলেছে হৃদয়
গভীর শীতের রাতে- ব্যথা কম পাবে ব’লে- সেই সমারোহ আর চাই?

জীবন একাকী আজো- ব্যথা আজো- এখন করি না তবু বিয়োগের ভয়
এখন এসেছে প্রেম;- কার সাথে? কোন্‌ খানে? জানি নাকো;- তবু সে আমারে
মাঠে-মাঠে নিয়ে যায়- তারপর পৃথিবীর ঘাস পাতা ডিম নীড়ঃ সে এক বিস্ময়

এ-শরীর রোগ নখ মুখ চুল- এ-জীবন ইহা যাহা ইহা যাহা নয়;
রঙিন কীটের মতো নিজের প্রাণের সাধে একরাত মাঠে জেগে রয়

কনকনে শীতের কবিতা

অনুপম ত্রিবেদী
জীবনানন্দ দাশ 

এখন শীতের রাতে অনুপম ত্রিবেদীর মুখ জেগে ওঠে।
যদিও সে নেই আজ পৃথিবীর বড়ো গোল পেটের ভিতরে
সশরীরে; টেবিলের অন্ধকারে তবু এই শীতের স্তব্ধতা
এক পৃথিবীর মৃত জীবিতের ভিড়ে সেই স্মরণীয় মানুষের কথা
হৃদয়ে জাগায়ে যায়; টেবিলে বইয়ের স্তূপ দেখে মনে হয়
যদিও প্লেটোর থেকে রবি ফ্রয়েড নিজ-নিজ চিন্তার বিষয়

পরিশেষ ক’রে দিয়ে শিশিরের বালাপোশে অপরূপ শীতে
এখন ঘুমায়ে আছে— তাহদের ঘুম ভেঙে দিতে
নিজের কুলুপ এঁটে পৃথিবীতে— ওই পারে মৃত্যুর তালা
ত্রিবেদী কি খোলে নাই? তান্ত্রিক উপাসনা মিস্টিক ইহুদী কাবালা
ঈশার শবোত্থান— বোধিদ্রুমের জন্ম মরণের থেকে শুরু ক’রে
হেগেল ও মার্কস: তার ডান আর বাম কান ধ’রে

দুই দিকে টেনে নিয়ে যেতেছিলো; এমন সময়
দু-পকেটে হাত রেখে ভ্রূকুটিল চোখে নিরাময়
জ্ঞানের চেয়েও তার ভালো লেগে গেল মাটি মানুষের প্রেম;
প্রেমের চেয়েও ভালো মনে হ’লো একটি টোটেম:
উটের ছবির মতো— একজন নারীর হৃদয়ে;
মুখে-চোখে আকুতিতে মরীচিকা জয়ে

চলেছে সে; জড়ায়েছে ঘিয়ের রঙের মতো শাড়ি;
ভালো ক’রে দেখে নিলে মনে হয় অতীব চতুর দক্ষিণরাঢ়ী
দিব্য মহিলা এক; কোথায় যে আঁচলের খুঁট;
কেবলি উত্তরপাড়া ব্যাণ্ডেল কাশীপুর বেহালা খুরুট
ঘুরে যায় স্টালিন, নেহেরু, ব্লক, অথবা রায়ের বোঝা ব’য়ে,
ত্রিপাদ ভূমির পরে আরো ভূমি আছে এই বলির হৃদয়ে?

তা হ’লে তা’ প্রেম নয়; ভেবে গেল ত্রিবেদীর হৃদয়ের জ্ঞান।
জড় ও অজড় ডায়ালেকটিক মিলে আমাদের দু-দিকের কান
টানে ব’লে বেঁচে থাকি— ত্রিবেদীকে বেশি জোরে দিয়েছিলো টান।

কন্‌কনে শীত তাই
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কন্‌কনে শীত তাই
চাই তার দস্তানা;
বাজার ঘুরিয়ে দেখে,
জিনিসটা সস্তা না।
কম দামে কিনে মোজা
বাড়ি ফিরে গেল সোজা–
কিছুতে ঢোকে না হাতে,
তাই শেষে পস্তানা।

শীতের কবিতা

শীতের ভোর
আর আই রাতুল

সাদা চাদরে, রোদের আদরে,
ঘাসেতে বিন্দু শিশির,
হলো ভোর, খোলে সূর্যের দোর,
কাঁটলো আঁধার নিশির।

ডাকলো না পাখি, খুললো না আঁখি,
দেখলো না কেউ ভোর,
নিরব সব, নেই কলরব,
কাটে নি ঘুমের ঘোর।

বেঞ্চিতে বসে,স্বপ্নদোষে,
চিন্তিত নেই কেউ,
খড়ের উমে,কুকুর ঘুমে,
ডাকে না ঘেউ ঘেউ।

সাদা চাদর, শীতের আদর,
ঢাকলো চিহ্ন দূর,
নর্তকীর আজ, নেই কোন কাজ,
বাজে না পায়ের নূপুর।

ভোরের কবি,আঁকে না ছবি,
লিখে না কবিতা-গল্প,
নদীর জল,স্পর্শে পল,
সে বড় এক কল্প।

সাদা সাগর,ধূপের আগর,
কুয়াশায় ভরা ভোর,
বড় কবিরাজ,ঘুমেতে আজ,
খুললো না তার দোর।

ডাকলো পাখি,খুললো আঁখি,
কাঁটলো ঘুমের ঘোর,
হায় হায় হায়,জেলে গান গায়,
পেরুলো শীতের ভোর।

শীতের সকাল
– মুহম্মদ হাসিবুল হাসান

সুপ্রভাত হে বন্ধুবর
সূর্য রাঙা অপরূপ এই বাংলায়।
যেখানে সহস্র শিশির বিন্দু জমে আছে
দুর্বা ঘাসের গা’য়।

ঘন কুয়াশায় ঢাকা মেঠো পথ
সূর্য উঠছে ফুটি।
ঘন কলরব, পাখি দলে সব
ধরে কুয়াশার টুটি।

মাঠ ছেয়ে যায় হলুদ বানে
সরষে দোলে ক্ষেতে।
মৌমাছিরা গান গেয়ে যায়
উল্লাসে আজ মাতে।

বাংলা গায়ের সবুজ ক্ষেতে
কাক ডাকা সব ভোরে।
ধানের শীষে শিশির বিন্দু
মুক্তো হয়ে ঝরে।

মেঠো গায়ের বাঁকা পথে
খেজুর গাছের সারি।
শীত এসেছে শীত এসেছে
দুলছে গাছে হাড়ি।

খেজুর রসে উঠলে ভরে
কাঁচা মাটির হাড়ি।
দুষ্ট ছেলেরা ফাঁদ ফেঁদেছে
করবে রাতে চুরি।

বাংলা বধু করবে পিঠে
খেজুর গাছের রসে।
তুমিও খাবে আমিও খাব
গোল হয়ে সব বসে।

বাংলা মায়ের আঁচল পাতা
শিশির ভেজা ঘাসে।
এমন রুপ আর পাবেনা ভাই
খুঁজলে সকল দেশে।

শীতের ভোরের কবিতা

শীতের ঋতুতে উপভোগ করার মতো সময় হচ্ছে শীতের সকাল। শীতের সকালে গ্রামীণ জীবন বেশ চমৎকার। কৃষকের মাঠে যাওয়া, কুয়াসা যুক্ত রাস্তা, সকালে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা ইত্যাদি। শীতের সকালে গ্রামের বাড়িতে পিঠা বানানোর উৎসব হয়। নিচে শীতের ভোরের কবিতা টি দেওয়া আছে।

আঁধার কালো ভোরের আলো
চড়াই পথে আদ্র ভুবন,
তিমির সাজে দিনের মাঝে
মাঘে ঘটে সূর্য হরণ।

সূর্যি মামার নিষ্ক্রিয়তা
দেখে যায় নিস্পৃহে,
বাহিরে ঘন কুয়াশা বাহে
বন্দী হয়ে রহি গৃহে।

উত্তাপহীন মলিন ভোর
কাজেতে এনেছে ভাটি,
ভোরের উত্তাপ নিগ্রহ করে
বরফ করেছে মাটি।

তেজি মামা হয়েছে মন্দা
সংশয় এনেছে দ্বারে,
শীতের দাপটে প্রাণ চঞ্চল
গ্রামের কুঁড়ে ঘরে।

কৃষক চলে বিলের পথে,
কেহ বহে খেঁজুর রস,
কুয়াশা মাঝে জীর্ণ জীবন
আমোদে এনেছে ধস।

ভোরেতে কেহ আগুন পোহা
চালা ঘরের পাড়ে,
জীর্ণ বস্ত্রে যায়না শীত,
শৈত্য বায়ুর তোড়ে।

শৈত্যে কেহ রোগে ভুগে,
এ ঋতু বড় বন্ধুর,
এ সকাল বড় নিন্দিত,
সব প্রাণ করে মন্থর।

তবু কিছুক্ষন চঞ্চল গ্রাম
আমোদে গাহে গীত,
বেভাড় পাঠায় কুটুমবাড়ি
পিঠায় মাতায় শীত।

উঠে কাকভোরে গায়ের বধু
বানায় নানান পিঠা,
খেঁজুরের গুড়ে রসের পিঠা,
আহারে স্বাদে মিঠা।

কুটুমবাড়ি বেভাড় পাঠায়
মিঠা বাড়ে সম্পর্কে,
আত্মীয়তা রঙে মেতে উঠে,
হরেক পিঠার মোড়কে।

শেষ কথা

শীত আসে আবার এক সময় চলে যায়। তবে শীতের অনুভতিতা আমাদের মনে রয়েই যায়। তাই তো বছর শেষে আমরা শীতের আগমনের জন্য অপেক্ষা করি। অপেক্ষার পড়ে আবারো আমাদের মাঝে কুয়াসা নিয়ে শীতের সকাল চলে আসে। যা এই কবিতা গুলোতে বোঝানো হয়েছে। আসা করছি এই পোস্ট থেকে জীবনানন্দের শীতের কবিতা ও কোন কনে শীতের কবিতা গুলো পড়তে পেরেছেন। বিভিন্ন ধরনের কবিতা পড়তে আমার সাথে থাকুন।

আরও দেখুনঃ

শীতের সকাল নিয়ে ক্যাপশন ও কিছু কথা

শীতের সকাল স্ট্যাটাস, ক্যাপশন, উক্তি ও বাণী