শবে বরাতের আমল করার নিয়ম

আরবি শাবান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখ মধ্যে রাতে পবিত্র শবে বরাত পালন করা হয়। সাবন মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে চাঁদ উঠার মাধ্যমে মুসলমানদের শবে বরাত ও বরকতময় তারের শুরু হয়। এই রাতে বিশেষ ভাবে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত এর মাধ্যমে শবে বরাতের রাত পালিত করতে হবে। কুরআনে উল্লেখ আছে, শবে বরাতের রাতে জমিনে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের কে পাঠিয়ে থাকে। তারা মানুষের মনের সুখ ও দুঃখের কথা শুনে। যার কারণে এই রাত কে ভাগ্য পরিবর্তনের রাত বলা হয়ে থাকে।

একজন মুসলিম সঠিক ও সহিহ ভাবে আমলের মাধ্যমে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবে এই রাতে। রমজান মাসের আগে শবে বরাত পালনের মাধ্যমে রমজানের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। মহানবী (সাঁঃ) এই মাস গুলোতে বেশি বেশি ইবাদত করত। শবে বরাতের রাতে বিশেষ কিছু আমল আছে। এই আমল সম্পর্কে জানতে হবে এবং সঠিক নিয়মে পালন করতে হবে। ২৫ ফেব্রুয়ারি রোজ রবিবার দিবাগত রাতে শবে বরাত পালন করা হবে।

শবে বরাতের আমল

শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। এটি একটি ফারসি শব্দ। ফারসি ভাষায় শব অর্থ রাত এবং বরাত অর্থ মুক্তি। এই রাতে আল্লাহ তায়ালা তার সৃষ্টি জগতকে মুক্তির জন্য খুলে দেয়। তার বান্দাদের জীবন পরিবর্তনের এক মহান সুযোগ পাঠিয়ে দেয় এই রাতে। আলাহ তায়ালা কোনো ব্যাক্তিকে এই বরকতময় রাতে ফিরিয়ে দেয় না। এজন্য সঠিক ভাবে শবে বরাতের আমল করতে হবে।

এই রাতে আমলের জন্য বিশেষ মাধ্যম হচ্ছে নামাজ। সারা রাত নামাজ পড়ার মাধ্যমেও শবে বরাত পালন করা যাবে। এছাড়া আল কুরআন পাঠ করা, দোয়া ও দরুদ পড়া, কবর জিয়ারত করা, তসাবিহ পরাম জিকির করা ইত্যাদি আমলের মাধ্যমে শবে বরাতের আমল করা যাবে। এজন্য নিয়ত ও নিয়ম সঠিক হতে হবে।

শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস ও আলোচনা

শবে বরাতের আমল এর ফজিলত

শবে বরাত, ইসলামিক মাস্যিদের একটি বিশেষ রাত্রি, যা ইসলামি ঐতিহাসিক ও সাস্তানিক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই রাতে মুসলমানরা পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করতে, আল্লাহর দয়া ও করুণার অনুভূতি করতে প্রচুর ইবাদত করে। শবে বরাতের আমলের ফজিলতের মধ্যে কিছু বিশেষ উল্লেখযোগ্য পয়েন্ট হলো:

নামাজের কাজে বাড়ানো:
শবে বরাতে মুসলিম বৃদ্ধি আমলে বিশেষভাবে নামাজের কাজে বাড়ানো প্রস্তুত থাকে। এই রাতে নামাজের বিশেষ কাজে মধ্যস্ত হওয়ার মাধ্যমে গুনাহমুক্তি এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রাপ্ত হতে পারে।

কুরআন তিলাওয়াত:
শবে বরাতে কুরআনের তিলাওয়াত করা একটি মহৎ ইবাদত। মুসলিম ব্রদ্ধিরা কুরআন পড়তে এবং তার অর্থ বুঝতে প্রয়াসরত হয়।

দোয়া ও ইস্তিগফার:
শবে বরাতে মুসলিম বৃদ্ধিরা আল্লাহর দিকে তাওবা করতে, অপরকে ক্ষমা করতে এবং দোয়া করতে উৎসাহিত হয়। ইস্তিগফারের আমল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

জিকির ও হাদীস শরীফ পাঠ:
শবে বরাতে মুসলিম বৃদ্ধিরা আল্লাহর নাম ও গুণগান, প্রস্তাবনা করার মাধ্যমে হাদীস শরীফ পড়তে এবং ইসলামের আদর্শ আচরণ করতে প্রয়োজনীয় অনুপ্রেরণা প্রাপ্ত করে।

সকল বান্দা ও মুসলিমদের ক্ষমা চাওয়া:
শবে বরাতে মুসলিম বৃদ্ধিরা সকল মুসলিমদের জন্য দোয়া করতে এবং তাদের সকল গুনাহ ক্ষমা চাওয়ার প্রচেষ্টা করতে সাধন করতে পারে।

এই অমূল্য আমলগুলি মুসলিমদের পক্ষ থেকে শবে বরাতের ফজিলত বৃদ্ধি করে এবং তাদের দীনী জীবনে একটি উত্তম পথ দেখাতে সাহায্য করে।

শবে বরাতের আমল সমূহ

প্রতি বছরে এক বার শবে বরাত পালন করা হয়। আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখে শোবে বরাত পালিত হলেও, ইংরেজি ও বাংলা বছরের তারিখ ও দিন পরিবর্তন হয়। যার কারণে চাঁদ গণনার মাধ্যমে এই দুই সালের জন্য তারিখ নির্ধারন করতে হয়। আকাশে শাবান মাসের ১৪ তারিখে চাঁদ দেখা গেলে শোবে বরাত শুরু হবে। এই রাতের প্রধান কাজ যেকোনো ভাবে আল্লায় তায়ালার ইবাদত-বন্দেগী করা। শবে বরাতের আমল সমূহ জানতে হবে এবং সেই আমল গুলো পালন করতে হবে।

নফল ইবাদতে লিপ্ত থাকা

যে সকল ইবাদত ফরজ, ঐ ইবাদত গুলো আমাদের পালন করতেই হবে। যেমন প্রতি দিন পাছ ওয়াক্তই নামাজ পড়া। আর যেসকল ইবাদত আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঁঃ) করেছেন, ঐ ইবাদত গুলো অনুসরণ করা হচ্ছে সুন্নত ইবাদত। যেমন প্রতিদিন সুন্নত নামাজ মূলত মাদের প্রিয় নবীর জন্য পড়া হয়। এর বাইরে আরেকটি ইবাদত হচ্ছে নফল ইবাদত। নফল ইবাদত করলে সওয়াব পাওয়া যাবে, না করলেও কোনো সমস্যা নেই। আর শবে বরাতের রাতের সকল ইবাদত নফল হিসেবে গণ্য হয়।

নামাজ পড়া

সকল মুসলমানদের জন্য প্রতিদিন পাছ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ। তবে এর বাইরে রয়েছে সুন্নত ও নফল নামাজ। প্রতিদিন সুন্নত নামাজ পড়া হয়। চাইলে নফল নামাজ পড়া যাবে। এজন্য কোনো  নেই। যেকোনো নফল ইবাদত মানে বাড়তি নেক আমল করা। শবে বরাত দুই রাকাত নফল নামাজ: প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর একবার আয়াতুল কুরসি এবং ১৫ বার করে সূরা এখলাছ পড়তে হবে। সালাম ফিরিয়ে ১২ বার দুরূদ শরীফ পড়তে হবে।

তাসবিহ পড়া

এই আমল করেও শবে বরাত পালন করা যায়। বিভিন্ন জিকিরের মাধ্যমে তাসবিহ পড়বেন। জিকির করাও শবে বরাতের আমলের একটি অংশ। তাই সারারাত জিকি-ফিকির করে শবে বরাত পালন করা যাবে। তাসবিহ পাঠ করার জন্য যেকোনো জিকির করতে পারবেন। চাইলে এই দিনে এক এক সময় এক এক জিকির করা যাবে।

আল কুরআন পাঠ করা

কুরআন শরিক পড়ার এক ধরনের ইবাদত। আর শবে বরা পালনের প্রধান কাজ হচ্ছে ইবাদত করা। আর সকল ইবাদত শবে বরাতের আমলের মধ্যে পড়ে। তাই শবে বরাতের রাতে নাম শেষ করে বা নামাজ পড়া ব্যাতিত আল কুরআন পাঠ করতে পারবেন। নামাজ শেষ করে কুরআন পাঠ করা অনেক বড় একটি আমল হবে।

কবর জিয়ারত করা

কবরে শাহিত মুসলমানদের জন্য দোয়া করা একটি সওয়াবের অংশ। যেহেতু এই রাতে আল্লাহ তায়ালা আমাদের মনের কথা শুনে, তাই এই রাতের একটি অংশে কবর জিয়ারত করে আমল করা যাবে। কবরে সাহিত সকল মুসলমানদের জন্য এই রাতে দোয়া করবেন। আল্লায় তায়ালা চাইলে আপনার দোয়াটি কভুল করে কবর বাসিকে মাপ করে দিতে পারে। তাই আমলের অংশে কবর জিয়ারত করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।

মৃতদের জন্য মাগফিরাত করা: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি এক রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে কাছে না পেয়ে খোঁজ করতে বের হলাম। হঠাৎ দেখলাম, তিনি বাকি কবরস্থানে আছেন। তিনি বললেন, ‘(হে আয়েশা) তোমার কি এ আশঙ্কা হয় যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তোমার ওপর জুলুম করতে পারেন?’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমার ধারণা হলো, আপনি অন্য কোনো স্ত্রীর কাছে গিয়েছেন।’ তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে দুনিয়ার আকাশে আসেন এবং কালব গোত্রের ছাগল-ভেড়ার পশমের চেয়েও অধিকসংখ্যক লোককে ক্ষমা করে দেন।’ (তিরমিজি: ৭৩৯; ইবনে মাজাহ: ১৩৮৯)

দোয়া-দরুদ পড়া

সাধারণ ভাবে যেকোনো দোয়া বার বার পড়ার মাধ্যমেও শবে বরাতের আমল করা সম্ভব। চাইলে এই রাতে বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করার মাধ্যমে ইবাদত করা যাবে। তাউই নামাজের পর বসে বসে দরুদ শরিফ পড়বেন। দরুদ শরিফ পরেও শবে বরাতের আমল কভুল হবে।

রোজা রাখা

এই সময় রোজা রাখার মাধ্যমেও আমল করতে পারবেন। তবে শবে বরাতের জন্য নির্দিষ্ট কোণও রোজার রাখার নিয়ম নেই বা কয় টি রোজা রাখতে হবে এই বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। আলি ইবনে আবি তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন অর্ধ শাবানের রাত তোমাদের সম্মুখে আসে, তখন তোমরা তাতে কিয়াম তথা নামাজ আদায় করো এবং পরবর্তী দিনটিতে রোজা রাখো।’ (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৮)

শবে বরাতের আমল করার নিয়ম

শবে বরাত পালনের সময় অনেক কাজ আছে, যেগুলো করতে পারবেন। আমার অনেক কাজ থেকে এই রাতে বিরত থাকতে হবে। তাই সকল মুসলিমদের শবে বরাতের আমল করার নিয়ম জেনে আমল করতে হবে। এই রাতে যেসকল কাজ করা যাবে এবং যেসকল কাজ করা যাবে না এখানে দেওয়া আছে।

করনীয় কাজ গুলোঃ

  • রাত জেগে ইবাদত করা।
  • নফল নামাজ পড়া।
  • তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া।
  • কুরআন তেলাওয়াত করা।
  • দোয়া-মুনাজাত করা।
  • আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
  • গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা।

যে কাজ থেকে বিরত থাকতে হবেঃ

  • গান বাজনা করা।
    নাচ গান করা।
  • খাওয়া-দাওয়া করা।
  • ঘুমিয়ে থাকা।
  • নিজের কারণে অন্যর ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না।

শেষ কথা

শবে বরাত পালন সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত নেই। যে সকল কাজ হালাল সে সব কাজ গুলো করবেন। শবে বরাত পালনের উত্তম আমল হচ্ছে নামাজ পড়া। নামাজ শেষে কুরআন পড়া। এবং তার পর দোয়া ও দরুদ পাঠ করা। এর এক ফাকে কবর যিয়ারত করা। সম্ভব হলে সব ইবাদত করার চেষ্টা করবেন। শবে বরাতের আমল করলে অনেক ফজিলত পাওয়া যাবে।

আরও দেখুনঃ

শবে বরাত কত তারিখে ২০২৪

শবে বরাত কবে ২০২৪