পৃথিবীতে যুগে যুগে অনেক নবী ও রাসুল এসেছে। সেই সাথে অনেক হাদিস সৃষ্টি হয়েছে। শবে বরাত মুসলমানদের একটি পবিত্র রাত। এই রাতে নামজ, দোয়া ও অন্যান্য আমলের মাধ্যমে ইবাদত করতে হয়। এই রাতে ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা তার ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। যার কারণে একে ভাগ্য পরবর্তনের রাতও বলা হয়। শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস আছে। তবে কিছু হাদিস সত্য। আবার অনেক মিথ্য হাদিসও রয়েছে।
শবে বরাত একটি পবিত্র রাত। এটি পালন করা জায়েজ ও উত্তম। তবে এই রাতে কি কি কাজ করতে হবে তার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। হাদিসে এই সম্পর্কে কি বলে তা জানতে হবে। হাদিস পড়লে জানা যাবে এই রাতে কি কি কাজ করা যাবে, আবার কি কি কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে সকল হাদিস বিশ্বাস করা যাবে না। এজন্য কুরআন থেকে শবে বরাত সম্পর্কে জানতে হবে।
শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস
হাদিস হচ্ছে ইসলামিক দলিল। যেখানে ইসলামের সকল কার্যকলাপ উল্লেখ থাকে। আগের যুগে সাহাবিরা কি কি কাজ করতে, কোন কাজ করতে না এই সব সেখানে উল্লেখ করা আছে। আবার শবে বরাতের রোজা রাখা নিয়ে অনেক দ্বিমত আছে। কিছু মানুষের ধারনা শবে বরাতের জন্য নির্দিষ্ট রোজা আছে। তাই রোজা রাখার মাধ্যমে শোবে বরাত পালন করতে হবে। আবার অনেকে বিশ্বাস করেন যে, এই রাতের নির্দিষ্ট কোনো রোজা নেই। চাইলে রাখা যাবে, না রাখলেও সমস্যা নেই।এই সকল বিষয়ে অনেক হাদিসে স্পষ্ট উল্লেখ করা থাকে। আজকে শবে বরাত নিয়ে কিছু হাদিস জেনে নেওয়া যাক।
শবে বরাত একটি মুসলিমদের জন্য মুক্তিদাতা, ক্ষমা এবং আল্লাহর রহমতের একটি উপাস্য রাত। এই রাতে মুসলিমদের বড় অংশ কোরআন তাফসীর, দোয়া এবং ইবাদতে অধীন হয়। শবে বরাত সম্পর্কিত কিছু হাদিস নিম্নে দেওয়া হলো:
- হযরত আইশা রা (রাঃ) বলেছেন, নবীজি (সা:) বলেছেন, “আল্লাহর উপর ১৫ শবে শবান রাতে তিন প্রকার মুকফিরাতের কারণে সোনার আকাশ থেকে বিচ্ছিন্ন করেন: একটি জামিনি জোনাকির জন্য, একটি অয়ার ভিত্তিক বর্ষণের জন্য, এবং তৃতীয়টি অয়ার ভিত্তিক জোনাকির জন্য যে জনাকি তাদের সহিত যারা হযরত ইব্রাহীম (আ:) এর উম্মতে থাকতে চায়।” (আবু দাউদ)
- হযরত আইশা রা (রাঃ) বলেছেন, “নবীজি (সা:) এ বছরে এক বা দুটি বার আমার কাছে চুম্বন দান করতেন এবং তিনি কখনও আমার দিকে বিচ্ছিন্ন হননি। এতে বলতে তিনি এ মাসে শবে বরাতে হয়নি কিনা তা আমি বুঝতে পারিনি।” (বুখারি)
- হযরত আইশা রা (রাঃ) বলেছেন, “নবীজি (সা:) এবলে শবে বরাত থেকে কোন বিশেষ বিশেষ ইবাদত করতেন না, তাতে ব্যতিরেকে করতেন না এবং তিনি কখনও কোন বিশেষ দোয়া পড়তেন নি। তিনি যে কোনও সময়ে অয়ান, কিয়ামুল লিল বা অন্য কোন ইবাদত করতেন।” (বুখারি)
এই হাদিসগুলি থেকে বোঝা যায় যে, নবী (সা:) সম্পর্কে কোনও নির্দিষ্ট শবে বরাত ইবাদত নিয়েনননি এবং তিনি এতে কোন বিশেষ ইবাদত বা দোয়া করননি। তবে, মুসলিমদের এই রাতে ইবাদত, দোয়া এবং কোরআন তাফসীর করার জন্য আলোচনা ও ধারাবাহিক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়ে থাকে।
শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস কি বলে
মুসলমানদের সঠিক পথে চলার জন্য আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে আল কুরআন নাজিল করেছেন। মানুষের হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে বহু নবীও রাসুল পাঠিয়েছেন। এরপর আমাদের সমাজে পূর্বের রীতিনীতি সম্পর্কে হাদিস পাওয়া গেছে। বর্তমানে কোন টি আসল হাদিস বা কোন হাদিস টি নকল এটা জানা কঠিন হয়েছে। এই যুগে সত্য মিথ্যা একত্রে হয়ে গেছে। যার কারণে আমরা সঠিক কাজ করছি না ভুল ভাবে শবে বরাত পালন করতেছি বোঝা সম্ভব হয় না। যার কারণে শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস কি বলে তা জানার চেষ্টা করি।
সলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে শবে বরাতের একটি মৌলিক প্রস্তাবনা হলেও এতে নামাজ, রোজা, দোয়া এবং অন্যান্য ইবাদত করার জন্য কোনও নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান নেই। এই বিষয়ে প্রস্তুত হলে একটি হাদিস যা বলেছেন:
হযরত আইশা রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (সা:) বলেছেন, “আমি যখন শবে বরাতে থাকি, আমি দেখি যে বস্তুগুলি হয়ে যাচ্ছে কাফিরদের জন্য, সেগুলি হলো: মৌসুম বৃষ্টি, এক ধারা জোনাকির জন্য বৃষ্টি, এক ধারা জোনাকির জন্য বয়স্ত হয়া, মৃত্যু করা এবং আল্লাহর কাছে তারা হাসিয়ে আছে।” (বুখারি)
এই হাদিসে উল্লেখিত কিছু পয়েন্টঃ
- এই হাদিসে কোনও বিশেষ ইবাদত বা প্রস্তুতির উল্লেখ নেই, তবে একই সময়ে শবে বরাতের জন্য কোনও পৃষ্ঠভূমি নেই।
- শবে বরাতের সময় একে অন্যকে জোনাকির জন্য বৃষ্টি বা হাসির উল্লেখ করা হয়েছে, তবে এটি একটি স্যাম্বলিক ভাষা হতে পারে এবং ব্যাখ্যার মাধ্যমে মৌলিক ইবাদতের মূল্যাংকনে ব্যবহৃত হয়েছে।
- হাদিসে শবে বরাতে কোনও বিশেষ ইবাদতের প্রস্তুতির কথা হয়নি, বরং আল্লাহর দয়া এবং কাফিরদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে।
সুতরাং, এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, শবে বরাতের সময়ে নামাজ, রোজা, দোয়া এবং অন্যান্য ইবাদত সম্পর্কে কোনও নির্দিষ্ট নির্দেশ নেই। মুসলিমদের শবে বরাতে ইবাদত করা হৈসে তাদের নিজেদের নিয়ে একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।
শবে বরাত সম্পর্কে কোরআন হাদিসের আলোচনা
কুরআন ও হাদিস দুই টি দুই রকমের। যদিও এই দুই টি বিষয়ে জানা একজন মুসলিমের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আল কুরআন হচ্ছে মানুষের সঠিক পথ প্রদর্শনের মাধ্যমে। কি কাজ করা যাবে, কোন কাজ করা যাবে না, পৃথিবীতে কি হবে এই সকল বিষয় আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু হাদিস হচ্ছে অন্য রকমের। এখানে প্রচলিত কাজও পাওয়া যায়। মূলত আগের যুগে আমাদের ইসলাম অনুসারীরা কি কাজ করত, কিভাবে জীবন যাবন করত বা নবী রাসুল কি শিখিয়েছেন এই সকল বিষয় হাদিসে লেখা থাকে। কিন্তু যুগের পরিবর্তনে আজ মিথ্যা হাদিসও আমাদের কে প্রভাবিত করতেছে। এজন্য শবে বরাত সম্পর্কে কোরআন হাদিসের আলোচনা জানতে হয়।
- “আমি একটি মুবারক রাতে অফসুষান অবতীর্ণ করেছি এবং তোমাদের উপকারের জন্য একটি উপকারী রাত। হত্যারা দুর্ভাগ্যবানরা এই রাতে আসে, তাদের সহস্রাধিক জনকে প্রেরণা করেছি।” (সূরা দুখান, আয়াত 3-6)এই আয়াতে শবে বরাতের মুহূর্ত কে মুবারক এবং উপকারী বলা হয়েছে।
হাদিসে শরীফ:
- হযরত আইশা রা (রাঃ) বলেছেন, নবীজি (সা:) বলেছেন, “আল্লাহ তাআলা শবে বরাতে জড়িত রোজাদারদের ক্ষমা করবেন এবং বন্ধুত্বপূর্ণ তাদের মধ্যে তিনি বন্ধুত্ব স্থাপন করবেন এবং দুর্বলবাদী তাদের দোয়ায় নয়া আবৃত্তি করবেন এবং কোন বিপর্যয় হবে না।” (মুসলিম)
- হযরত আবূহুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা:) বলেছেন, “আল্লাহ তাআলা এবারের শবে বরাতে জড়িত রোজাদারদের ক্ষমা করবেন এবং তারা তাদের প্রতি এবং তাদের মধ্যে কোন বিপর্যয় হবে না।” (ইবনু মাজাহ)
এই আয়াত ও হাদিস গুলি থেকে বোঝা যায় যে, শবে বরাত একটি বিশেষ রাত, যেখানে আল্লাহ তাআলা মুকফিরাতকে ক্ষমা করে এবং মুসলিমদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও দোয়ার মাধ্যমে সহানুভূতি তৈরি করে। মুসলিমরা এই রাতে ইবাদত, দোয়া ও তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আশীর্বাদ এবং ক্ষমা অর্জন করতে পারে।
শবে বরাত সম্পর্কে আরবি হাদিস
১. হযরত আবু মুসা আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত: عَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ يَطَّلِعُ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلَّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ
অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলা শাবান মাসের অর্ধেক রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপূর্ণ ব্যক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং: ৭৬০]
২. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত: عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ يَنْزِلُ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيَغْفِرُ لِعِبَادِهِ أَكْثَرَ مِمَّا يَغْفِرُ فِي لَيْلَةٍ أُخْرَى
অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলা শাবান মাসের অর্ধেক রাতে পৃথিবীর নিকটতম আকাশে অবতরণ করেন এবং অন্য যেকোনো রাতের তুলনায় বেশি বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।” [সুনান আত-তিরমিযী, হাদিস নং: ৩৫৪৪]
৩. হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُومُ مِنَ اللَّيْلِ فَيَصَلِّي حَتَّى تَتَفَطَّرَ قَدَمَاهُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ تَفْعَلُ هَذَا وَقَدْ غُفِرَ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ قَالَ أَفَلَا أَكُونُ عَبْدًا شَكُورًا
অর্থ: “হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রাতের বেলায় এতক্ষণ নামায পড়তেন যে, তার পায়ের পাতা ফুলে যেত। আমি বললাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি এ কেন করছেন? আপনার তো অতীত ও ভবিষ্যতের সকল গুনাফ মাফ করে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বললেন, ‘আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হব না?'”
শবে বরাত সম্পর্কে প্রচলিত হাদিস
আমাদের সমাজে অনেক প্রচলিত হাদিসের তৈরি হয়েছে। যার কারণে সত্য মিথ্যা জানতে পারি না। শবে বরাতের কিছু প্রচিলত হাদিসের মধ্যে হচ্ছে রোজা রাখা। ইসলাম ধর্মে নির্দিষ্ট কয়েক দিন বাদে সারা বছর রোজা রাখা যাবে। তাই চাইলে এই দিনে রোজা রাখলেও সমস্যা নেই। রাতে কুরআন তিলায়ত করা। দোয়া-দরুদ পাঠ করা। আর কবর জিয়ারত করাও যাবে।
শেষ কথা
আমাদের সত্য-মিথ্য জেনে শবে বরাত পালন করতে হবে। শবে বরাতের সময় রোজা, নামাজ ও ইবাদত করে পালন করতে পারবেন। ইতোমধ্যে এই সম্পর্কে সকল হাদিস সংগ্রহ করে দিয়েছি। শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস যা যা বলেছে, ঠিক সেভাবে পালন করবেন। সত্য ও মিথ্যা হাদিসের পার্থক্য বুঝতে হবে।