শবে বরাত একটি মর্যাদাপূর্ণ রাত, যা হিজরি শাবান মাসের ১৪ তারিখে প্রস্তুত হয়। এই রাতে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং তিনি তার সকল সৃষ্টিকে ক্ষমা করেন, শুধু শিরককারী ও বিদ্বেষ-পোষণকারীদের ছাড়া। এই রাতে আল্লাহ তাআলা অপার অনুগ্রহ নাজিল হয় এবং অসংখ্য বান্দাকে তিনি ক্ষমা করে দেন। শবে বরাতের উত্তম আমল রোজা রাখা। শবে বরাতের রোজা কয়টি তাই জানা প্রয়োজন।
এই শবে বরাত উপলক্ষে অনেকে রোজা রাখেন, এবং এটি সুন্নত হিসেবে প্রস্তুত হয়। হাদিসে বর্ণিত মতে, শাবান মাসের ১৫ তারিখ শবে বরাতের দিন হওয়ায় এই দিনে রোজা রাখা সর্বোত্তম। তবে, ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ তিনটি রোজা রাখাই সর্বোত্তম।শবে বরাত হলো সকল মুসলমানদের জন্য একটি ফজিলতের রাত, যা মুক্তির রাত বা লাইলাতুল বারাআত হিসেবে পরিচিত। এই রাতে রোজা রাখা মুসলমানদের মধ্যে একটি প্রচলিত আমল।
শবে বরাতের রোজা কয়টি
বছরে একবার শবে বরাত পালন করা হয়। বিশ্ব মুসলিম শবে বরাতের পালনের মাধ্যমে বিশ্বাসীকে রমজান মাসের আগমন কে জানিয়ে দেয়। এশবে বরাত মূলত সাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে শুরু হয়। আর এই রাতে বিশ্ব মুসলমান নানা রকম আমলের মধ্যে লিপ্ত হয়। যেকোনো ধরনের ইবাদত করে শবে বরাত পালন করা যাবে। তবে অনেক মুসলমান শবে বরাতের সময় রোজা রাখতে চায়। এই বিষয়ে অনেকে জানে না শবে বরাতের রোজা কয় টি বা এই সময় রোজা রাখার নিয়ম আছে কি না?
নির্ধারিত কয়েকটি দিন ব্যাতিত সারা বছর রোজা রাখা যাবে। তাই চাইলে শবে বরাতের সময় রোজা রাখতে পারবেন। শবে বরাতের রোজা রাখা সম্পর্কে কোণও হাদিস নেই। কয় টি রোজা রাখতে হবে এই বিশয়েও হাদিসে উল্লেখ করা নেই। আইয়ামে বিজের রোজা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘প্রতি মাসে তিনটি করে রোজা রাখা সারাবছর রোজা রাখার সমান।’ (বুখারি: ১১৫৯, ১৯৭৫) আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমার বন্ধু রাসুলুল্লাহ (স.) আমাকে তিনটি অসিয়ত করেছেন—এক. প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা, দুই. দুই রাকাত চাশতের নামাজ পড়া, তিন. ঘুমের আগে বিতরের নামাজ পড়া।’ (সহিহ বুখারি: ১১৭৮)
চাইলে প্রতি মাসেই রোজা রাখা যাবে। সেই দিক থেকে যারা শবে বরাতের জন্য রোজা রাখতে চান, তারা শবে বরাতে সময় যেকোনো তিন দিন রোজা রাখবেন। এছাড়া এক দিন রোজা রাখলেও হবে। এই বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট হাদিস নেই।
শবে বরাতের রোজা কয়টি রাখতে হবে
নামাজ, রোজা ও বিভিন্ন আমলের মাধ্যমে শবে বরাত পালন করা হয়। কোনো হাদিসে শবে বরাতের নির্দিষ্ট আমলের কথা উল্লেখ নেই। যেকোনো নেক আমলের মাধ্যমে শবে বরাত পালন করা যাবে। এজন্য অনেকে নামাজ আদায় করে। কেউ আবার শবে বরাতের সময় রোজা রাখে। একটি, দুইটি বা তিন টি। তবে রোজা রাখার বিশয়েও কোনো মতবাদ পাওয়া যায়নি।
হজরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
“যখন শাবান মাসের মধ্য দিবস আসে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত কর ও দিনে রোজা পালন কর।”
(সুনানে ইবনে মাজাহ)
ব্যাখ্যা:
এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, শাবান মাসের ১৫ তারিখে রোজা রাখা সুন্নত।
তবে, শুধুমাত্র ১৫ তারিখেই রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়, বরং পুরো শাবান মাস জুড়েই নফল রোজা রাখার فضيلة রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজেও শাবান মাসে অধিক নফল রোজা রাখতেন।
অন্যান্য হাদিস:
হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
“শাবান মাসের রোজা রমজান মাসের রোজার পূর্বাভাস।”
(তিরমিযী)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি শাবান মাসের পূর্ণিমা রাতে রোজা রাখবে, তার জন্য আল্লাহ তা’আলা জাহান্নাম থেকে সত্তর বছরের দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন।”
(ইবনে মাজাহ)
উপসংহার:
উল্লেখিত হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায় যে, শবে বরাতের রোজা রাখা فضيلةপূর্ণ একটি আমল। তবে, এটি বাধ্যতামূলক নয়। যারা রাখতে পারবেন তারা রাখবেন, আর যারা রাখতে পারবেন না তারা বাদ দিতে পারবেন।
শেষ কথা
এখন পর্যন্ত শবে বরাতের রোজা নিয়ে কোণ হাদিস পাওয়া যায় নি। যেহেতু প্রতি মাসেই রোজা রাখা যায়, তাই চাইলে শবে বরাতের জন্য রোজা রাখতে পারবেন। এই পোস্টে শবে বরাতের রোজা কয়টি ও এই সম্পর্কে হাদিস গুলো শেয়ার করা হয়েছে। আসা করছি শবে বরাতের সময় কত টি রোজা রাখা যাবে তা জানতে পেরেছেন।
আরও দেখুনঃ