স্বাধীনতা দিবসের কবিতা ২০২৪

২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। জাতিয়ও দিবসের মধ্যে এটি অন্যতম। ১৯৭২ সালের মার্চের ২৬ তারিখ থেকে বাংলাদেশে স্বাধীনতা দিবস পালিত হচ্ছে। এই দিন টি মূলত ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চের ঘটনার মধ্যে দিয়ে পালিত হচ্ছে। ওইদিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার পর থেকে বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়। বঙ্গবন্ধুর দেওয়া এই প্রেরণা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে আরও ভয়াভহ করতে সক্ষম হয়। এই দিন সম্পর্কে অনেক কবি কবিতা লিখেছেন। তাদের লেখা স্বাধীনতা দিবসের কবিতা গুলো এখানে শেয়ার করা হয়েছে।

স্বাধীনতা দিবসের কবিতা

আজকের এই দিনে বাংলাদেশে স্বাধীনতা লাভ করেনি। মূলত বঙ্গবন্ধ বাংলাদেশ কে স্বাধীন দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলো। এই ঘোষণার মাধ্যমে সকল বাঙালি দেশ কে স্বাধীন করার জন্য প্রস্তুতি নেই। সকলে নির্বিশেষে মুক্তি যুদ্ধে অংশ নেয়। এক সময় এই যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে। ২৬ শে মার্চ কে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়। আর এই দিবস ও দিন সম্পর্কে অনেক কবি সুন্দর সুন্দর কবিতা লিখেছেন। তাদের লেখা সেরা কবিতা গুলো দেওয়া আছে।

স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো
– নির্মলেন্দু গুণ

একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে
ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে: ‘কখন আসবে কবি?’
এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না,

এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,
এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না৷
তা হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি?
তা হলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে, ফুলের বাগানে

ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হদৃয় মাঠখানি?
জানি, সেদিনের সব স্মৃতি ,মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত
কালো হাত৷ তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ
কবির বিরুদ্ধে কবি,

মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,
বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,
উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,
মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ … ৷

হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি,
শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি
একদিন সব জানতে পারবে; আমি তোমাদের কথা ভেবে
লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প৷

সেই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর৷
না পার্ক না ফুলের বাগান, — এসবের কিছুই ছিল না,
শুধু একখন্ড অখন্ড আকাশ যেরকম, সেরকম দিগন্ত প্লাবিত
ধু ধু মাঠ ছিল দূর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়৷

আমাদের স্বাধীনতা প্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল
এই ধু ধু মাঠের সবুজে৷
কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে
এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক,

লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক,
পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক৷
হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত,
নিম্ন মধ্যবিত্ত, করুণ কেরানী, নারী, বৃদ্ধ, বেশ্যা, ভবঘুরে

আর তোমাদের মত শিশু পাতা-কুড়ানীরা দল বেঁধে৷
একটি কবিতা পড়া হবে, তার জন্যে কী ব্যাকুল
প্রতীক্ষা মানুষের: “কখন আসবে কবি?’ “কখন আসবে কবি?’
শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,

রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অত:পর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন৷
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হদৃয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার

সকল দুয়ার খোলা৷ কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি:
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম৷’
সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের৷

নির্মলেন্দু গুণ এর স্বাধীনতা দিবসের কবিতা

নির্মলেন্দু গুণ এর স্বাধীনতা দিবসের কবিতা গুলো অনেক জনপ্রিয়। এই কবি স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে অনেক কবিতা লিখেছেন। এই অংশে সেরা কয়েকটি  নির্মলেন্দু গুণ এর স্বাধীনতা দিবসের কবিতা গুলো সংগ্রহ দেওয়া হয়েছে।

স্বাধীনতা, উলঙ্গ কিশোর
– নির্মলেন্দু গুণ

জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উল্ঙ্গ শিশুর মত
বেরিয়ে এসেছো পথে, স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবী হও।
তোমার পরমায়ু বৃদ্ধি পাক আমার অস্তিত্বে, স্বপ্নে,
প্রাত্যহিক বাহুর পেশীতে, জীবনের রাজপথে,

মিছিলে মিছিলে; তুমি বেঁচে থাকো, তুমি দীর্ঘজীবী হও।
তোমার হা-করা মুখে প্রতিদিন সূর্যোদয় থেকে
সূর্যাস্ত অবধি হরতাল ছিল একদিন,
ছিল ধর্মঘট, ছিলো কারখানার ধুলো।

তুমি বেঁচেছিলে মানুষের কলকোলাহলে,
জননীর নাভিমূলে ক্ষতচিহ্ন রেখে
যে তুমি উল্ঙ্গ শিশু রাজপথে বেরিয়ে এসেছো,
সে-ই তুমি আর কতদিন ‘স্বাধীনতা, স্বাধীনতা’ বলে

ঘুরবে উলঙ্গ হয়ে পথে পথে সম্রাটের মতো?
জননীর নাভিমূল থেকে ক্ষতচিহ্ন মুছে দিয়ে
উদ্ধত হাতের মুঠোয় নেচে ওঠা, বেঁচে থাকা
হে আমার দূঃখ, স্বাধীনতা, তুমিও পোশাক পরো;

ক্ষান্ত করো উলঙ্গ ভ্রমণ, নয়তো আমারো শরীরি থেকে
ছিঁড়ে ফেলো স্বাধীনতা নামের পতাকা।
বলো উলঙ্গতা স্বাধীনতা নয়,
বলো দূঃখ কোনো স্বাধীনতা নয়,

বলো ক্ষুধা কোন স্বাধীনতা নয়,
বলো ঘৃণা কোন স্বাধীনতা নয়।
জননীর নাভিমূল ছিন্ন-করা রক্তজ কিশোর তুমি
স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবী হও। তুমি বেঁচে থাকো

আমার অস্তিত্বে, স্বপ্নে, প্রেমে, বল পেন্সিলের
যথেচ্ছ অক্ষরে,
শব্দে,
যৌবনে,
কবিতায়।

শামসুর রহমানের এর স্বাধীনতা দিবসের কবিতা

স্বাধীনতা তুমি এই কবিতাটি শামসুর রহমান লিখেছেন। তার লেখা এই কবিতা অনেক জনপ্রিয় হয়েছে। স্বাধীনতা দিসব এলেই এই কবিতা পাঠ এর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় এই কবিতাটি অনেক ব্যবহিত হয়। শামসুর রহমানের এর স্বাধীনতা দিবসের কবিতা দেখুন।

স্বাধীনতা তুমি
– শামসুর রাহমান

স্বাধীনতা তুমি

রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।

স্বাধীনতা তুমি

কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো

মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-

স্বাধীনতা তুমি

শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা

স্বাধীনতা তুমি

পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।

স্বাধীনতা তুমি

ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।

স্বাধীনতা তুমি

রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।

স্বাধীনতা তুমি

মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।

স্বাধীনতা তুমি

অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।

স্বাধীনতা তুমি

বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর

শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।

স্বাধীনতা তুমি

চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।

স্বাধীনতা তুমি

কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।

স্বাধীনতা তুমি

শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক

স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।

স্বাধীনতা তুমি

উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।

স্বাধীনতা তুমি

বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।

স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।

স্বাধীনতা তুমি

গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,

হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।

স্বাধীনতা তুমি

খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,

খুকীর অমন তুলতুলে গালে

রৌদ্রের খেলা।

স্বাধীনতা তুমি

বাগানের ঘর, কোকিলের গান,

বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,

যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।

শেষ কথা

এই রকম আরও অনেক কবিতা পাওয়া যাবে। সেই কবিতা গুলো থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতা গুলো এখানে শেয়ার করেছি। এখানে দেওয়া কবিতা ২৬ শে মার্চের অনুষ্ঠানে আবৃতি করতে পারবেন। আশা করছি স্বাধীনতা দিবসের কবিতা সংগ্রহ করেছে। সকল শিশু এই সহজ কবিতা আবৃতি করতে পারবে। তাদের জন্যও কবিতা গুলো সংগ্রহ করতে পারেন।

আরও দেখুনঃ