বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা রাষ্ট্রভাষা বাংলা অর্জন করি। এই আন্দোলনে সালাম, রফিক, শফিক, বরকত ও জব্বার সহ আরও নাম না জানা অনেকে শহিদ হন। তাদের স্মরণের প্রতি বছর একুশের ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস বা শহিদ দিবস পালন করা হয়। অনেক কবি তাদের কবিতায় ভাষা আন্দোলনের বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। আজকে তাদের লেখা মাতৃভাষা নিয়ে বিখ্যাত কবিতা গুলো শেয়ার করা হয়েছে।
মাতৃভাষা নিয়ে বিখ্যাত কবিতা
যে সকল কবিতায় মাতৃভাষা, ভাষা আন্দোলন ও একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা পেয়েছে, ঐ কবিতা গুলো বিখ্যাত হয়েছে। প্রায় অনেক কবিতা মাতৃভাষা সম্পর্কে কবিতা লিখেছেন। তাদের মধ্যে কিছু কবির কবিতা বিখ্যাত ও জনপ্রিয় হয়েছে। এদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমার সোনার বাংলা কবিতা টি সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত। এটি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
এছাড়া কাজী নজরুল ইসলাম এর বাংলা ভাষার আমার মাতৃভাষা, জিবনানন্দ দাশ এর বাংলা কবিতা ও শামসুর রাহমানের বৃষ্টি কবিতার মাধ্যমে মাতৃভাষার মর্যাদা, বাংলা ও তার মৌলিকতা এবং ভাষার সৌন্দর্য ও মাতৃভাষা প্রশংসা পেয়েছে। যার কারণে উক্ত কবিতা গুলো বিখ্যাত হয়েছে।
আমার সোনার বাংলা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি ॥
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে–
ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি ॥
কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো–
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে–
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি ॥
তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিলে রে,
তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি।
তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে,
মরি হায়, হায় রে–
তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি ॥
ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে,
সারা দিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার পল্লীবাটে,
তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে,
মরি হায়, হায় রে–
ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, ও মা, তোমার রাখাল তোমার চাষি ॥
ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে–
দে গো তোর পায়ের ধূলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে।
ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে,
মরি হায়, হায় রে–
আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ ব’লে গলার ফাঁসি ॥
বাংলা ভাষার আমার মাতৃভাষা
কাজী নজরুল ইসলাম
আমার মাতৃভাষা, আমার মনের ভাষা,
তুমি আমার গর্ব, আমার অহংকার।
তোমার কোলে আমি খেলে বেড়ে উঠেছি,
তোমার স্তনে আমি দুধ পান করেছি।
তুমি আমার প্রথম শিক্ষিকা,
তুমি আমার জ্ঞানের দ্বার।
তোমার মাধ্যমে আমি জ্ঞান অর্জন করেছি,
তোমার মাধ্যমে আমি বিশ্বকে চিনেছি।
তুমি আমার ভাব প্রকাশের মাধ্যম,
তুমি আমার অনুভূতির ভাষা।
তোমার মাধ্যমে আমি আমার মনের কথা বলি,
তোমার মাধ্যমে আমি আমার অনুভূতি প্রকাশ করি।
তুমি আমার সংস্কৃতির বাহক,
তুমি আমার ঐতিহ্যের ধারক।
তোমার মাধ্যমে আমি আমার সংস্কৃতি লালন করি,
তোমার মাধ্যমে আমি আমার ঐতিহ্য ধারণ করি।
তুমি আমার স্বাধীনতার ভাষা,
তুমি আমার মুক্তির ভাষা।
তোমার মাধ্যমে আমি আমার স্বাধীনতা অর্জন করেছি,
তোমার মাধ্যমে আমি আমার মুক্তি পেয়েছি।
আমি তোমাকে ভালোবাসি, আমার মাতৃভাষা,
আমি তোমার প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আমার মাতৃভাষা।
আমি তোমাকে কখনো ভুলব না, আমার মাতৃভাষা,
আমি তোমাকে চিরকাল মনে রাখব, আমার মাতৃভাষা।
দীর্ঘ সংগ্রামে অর্জিত তুমি
একুশে ফেব্রুয়ারী,
একুশের রক্তেলেখা – আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা।
একুশ একুশ বলে আবার বাংলারই প্রান্তরে,
রক্তাক্ত গোলাপ রক্তে রাঙানো তাঁর মুখ।
এই রক্ত বিলাসী গোলাপটি কাহার তরে –
একুশের রক্তেলেখা বুকে এঁকে করেছি পণ।
ভুলবো না তোমায় কভু অসুখ দুঃখক্ষণ,
সালাম – বরকত – রফিক – জব্বার।
আরো হাজার শত ভাইয়ের রক্তে ভেজা,
২১ শে ফেব্রুয়ারী
স্মৃতির জানলা খুলে আজই মোদেরই অন্তরে।
ঐ যে দর্শিত বোনের ক্রন্দন আর মায়ের হাহাকার,
জাগিয়ে তোলে বায়ান্নর কত ধিক্কার।
পাকিস্থানের শাসকেরা করল আইন জারি,
উর্দু হবে রাষ্ট্রভাষা, বাংলা দাও ছাড়ি।
যুদ্ধ শুরু করেন – সকল দামাল ছেলে,
প্রাণ দিয়ে শহীদ হন, জয়টুকু মেলে।
স্বাধীন হল বাংলাদেশ তাদের ত্যাগের জন্য,
ধন্য মোরা সবাই আজ তাদের ত্যাগের জন্য।
বাংলা ভাষার মর্যাদা সবাই মোরা চাই
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হল তাই।
তাইতো সবার মুখে মুখে একই রকম বানী,
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী।
শেষ কথা
এই রকম আরও অনেক কবিতা পাওয়া যাবে। ঐ কবিতা গুলোও অনেকে পছন্দ করেছে। তবে এই পোস্টে দেওয়া কবিতা বর্তমানে বিখ্যাত হয়েছে। আশা করছি মাতৃভাষা নিয়ে বিখ্যাত কবিতা গুলো পড়ে নিয়েছেন। এর পাশা-পাশি মাতৃভাষা দিবস বা শহিদ দিবসের অন্যান্য কবিতা গুলো জেনে নিবেন।
আরও দেখুনঃ