একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা ক্লাস ১ থেকে ১০ম শ্রেণি

আজ মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই দিবস কে ২১ শে ফেব্রুয়ারি, শহিদ দিবস বা ভাষা দিবস বলা হয়। এই দিন টি প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখে পালিত হয়। এই দিবস টি ১৯৯৯ সালে ১৭ নভেম্বরে জাতিসংঘ কর্তিক ঘোষণার পর থেকে বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। তাই একে আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা শহিদ দিবস বলে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা প্রতিযোগিতা নেওয়া হয়।

সেখানে যারা একুশে ফেব্রুয়ারি, ভাষা দিবস বা শহিদ দিবস সম্পর্কে ভালো রচনা লিখতে পারবে, তাদের কে পুরস্কিত করা হবে। রচনায় অনেক সময় ২০০, ৫০০ বা ১০০০ শব্দ উল্লেখ থাকে। তাহলে সেই ভাবেই রচনা লিখতে হবে। এই পোস্টে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও ২১ শে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে ক্লাস ১ থেকে ১০ম শ্রেণির রচনা গুলো দেওয়া হয়েছে।

একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা

রচনা লিখার সময় সূচনা বা ভূমিকা, রচনার উদ্দেশ্য বা কারণ, ঐ দিনের পূর্বের ইতিহাস ও গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করতে হবে। সর্বশেষে সুন্দর একটি উপসংহার লিখে রচনা টি শেষ করতে হবে। এই নিয়ম গুলো অনুসরণ করে ১ম থেকে ১০ম শ্রেণির ২০০, ৫০০ ০ ১০০০ শব্দের একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা টি লেখা হয়েছে।

২১ শে ফেব্রুয়ারি রচনা ২০০ শব্দ

ভূমিকাঃ বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ভাষার জন্য জীবন দিতে হয়েছে। কেননা আমাদের মায়ের মুখের ভাষা বাংলা হলেও, তৎকালীন পাকিস্তান সরকার উর্দুকে আমাদের রাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টা করে। এই দাবি বাংলার দামাল ছেলেরা মেনে না নিয়ে ১৪৪ দ্বারা জারি করে মিছিল বের করে। ঐ দিনে পুলিশের গুলিতে সালাম, রফিক, শফিক, বরকত ও জব্বারসহ আরও অনেকে শহিদ হন। তাদের স্মরণে বাংলাদেশে জাতীয় শহিদ মিনার তৈরি করা হয়েছে। যেখানে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এই দিনে বাংলাদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শহিদ দিবস কে আনতর্জাতিক আবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ১৯৯৯ সালে। এটি বাংলাদেশের জাতীয় দিবস। এখন সারা দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনঃ 

একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের কে ভাষা আন্দোলনের আদি কথা জানতে হবে। বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় আজীবন এই দিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সেদিন সারা বিশ্ব দেখেছিলো, কিভাবে ভাষা কে ভালবাসতে হয়। ভাষা শহিদেররা আমাদের কে মাতৃভাষা বাংলা উপহার দিয়েছে, সেই সাথে সারা বিশ্বের মানুষ কে শিখিয়েছে কিছু ভালোভাসা পেতে হলে জীবনও দিতে হবে।

ভারতবর্ষ বিভাগের পর ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামে একটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। সেখানে পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) ও পশ্চিম পাকিস্তান (আজকের পাকিস্তান) নামে দুই টি শাখা ছিলো। বিভিন্ন রাজনীতি ও অর্থনিতিতে পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশ কে শাসন করত। এক সময়ে তারা আমাদের মুখের ভাষা বাংলাকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তাদের উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানায়। সেখানে থেকে ১৯৫২ সালে ভাষা আনদলন করা হয়। সেই দিন অনেক বাঙালি প্রাণ হারায়। এরপর বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব পাওয়া যায়।

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসঃ

১৯৫২ সালের সেই ভাষা আন্দোলনের কথা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে, সকল দেশ এর প্রতিবাদ জানায়। আর এই প্রবাদের চাপে পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এখন ২১ শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের একটি জাতীয় দিবস।

শুধু তাই নয় একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও পরিচয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও আমাদের ভাষা দিবস পালন করা হয়। এটি শুরু হয় ১৯৯৯ সাল থেকে। মাতৃভাষা দিবস কে আন্তর্জাতিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সহমত জানায়। এরপর জাতিসংঘ মাতৃভাষাকে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই দিবস যথা ক্রমে বাংলাদেশে পাশাপাশি অন্যান্য দেশে পালিত হওয়ায় একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বলা হয়।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্বঃ 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। এটি বিশ্ববিদ্যালয় ও সাহিত্যিক সমাজের মধ্যে একটি মহৎ উৎসব হিসেবে পুরস্কৃত হয়। এই দিনটির প্রথম উদ্দীপক হল বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনে, ১৯৫২ সালের এই দিনে ঢাকায় বহুল প্রজন্মের মানববন্ধন হয়ে দুইজন শহীদ দিতে হয়।আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল লক্ষ্য হল ভাষার সংরক্ষণ ও প্রচারের অধিকারে সমর্থন করা। ভাষা মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ঐক্যবদ্ধতা, এবং বিভিন্ন সমৃদ্ধির অনুভূতি হয়। এটি মানব সমাজের ভিন্নতা এবং ভাষাবিজ্ঞানী প্রাসঙ্গিকতা দ্বারা প্রকাশ পায়।

মাতৃভাষা হল কোনও জনগণের আত্মসম্মান এবং ঐতিহ্যিক মূল্যের একটি অমূল্যবান অংশ। এটি ভাষার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটির মাধ্যমে একটি জনগণ তার ভাষার মাধ্যমে আত্মসম্মান এবং একত্বের মনোভাব বজায় রাখে। আমরা এই দিনে আমাদের মাতৃভাষা উপস্থাপন করে এবং ভাষার উদ্বারণ করে জাগরুক হতে পারি যে, সব ভাষা গুলি একইভাবে মূল্যবান এবং সমর্থনশীল। মাতৃভাষার প্রচুর ব্যবহার করে সৃষ্টিতে একত্ববাদ ও বৈচিত্র্য বজায় রাখতে হবে, তাতে বিশ্বের সকল ভাষার সমৃদ্ধি হতে পারে।

একুশে ফেব্রুয়ারির পটভূমিঃ 

একুশে ফেব্রুয়ারি, একটি ঐতিহাসিক দিন, যা বাংলাদেশের জাতীয় মুকুট হিসেবে পরিচিত। এই দিনটি বাংলা ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি হিসেবে অনেকগুলি উপভোগ করা হয়। এই দিনটি স্বাধীন ভাষা প্রচার ও সংরক্ষণের জন্য অভিযোজিত হয়।এই দিনটি আমাদেরকে একত্র আসতে, ভাষার ঐতিহ্যিক মৌলিকতা বজায় রাখতে এবং ভাষার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি বিকশিত করতে উৎসাহিত করে। এটি আমাদের জাতীয় একত্রতা ও স্বাধীনতা ভাবনা উন্নীত করে, ভাষা ও সাহিত্যের মাধ্যমে সমর্থন ও সহিতার বাণী বজায় রাখতে সাহায্য করে।

এই দিনে আমাদের আত্মপ্রকাশ ও আত্মসম্মান তুলে ধরার জন্য ভাষা একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য খেলে। আমরা এই দিনটি মাতৃভাষা বাংলা এবং ভাষার মৌলিকতা বজায় রাখতে বলে এবং এটির মাধ্যমে আমাদের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি বজায় রাখতে হবে। একুশে ফেব্রুয়ারি একটি উদাহরণ, যা আমাদেরকে ভাষা, সাহিত্য, এবং সংস্কৃতির মৌলিক মূল্যের প্রতি আদর্শবাদী করে তোলে। এই দিনটি আমাদের সমৃদ্ধি এবং একত্রতা কে প্রশ্ন উত্তর করে এবং আমাদের জীবনে ভাষা ও সাহিত্যের গুরুত্ব স্থানান্তর করে।

অমর একুশের চেতনাঃ 

অমর একুশের চেতনা একটি ঐতিহাসিক ও উদ্দীপক অধ্যায, যা স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে বজ্রপাত করে আসে। একুশ ফেব্রুয়ারি সবার মাঝে জাগানো একটি চেতনা, যা মাতৃভাষা বাংলা এবং স্বাধীনতার অধিকারের প্রতি সত্তার অভিমান এবং জজ্বা সৃষ্টি করে। একুশের চেতনা আসলেই আমাদের মানবিক অধিকার এবং স্বাধীনতা প্রতি একজন নাগরিকের জাগরুক হওয়ার মাধ্যমে দেখা যায়। এই দিনে আমরা মাতৃভাষার সম্মান এবং প্রচুর ব্যবহার করে এবং ভাষা বিষয়ক জাগরুকতা বাড়াতে আগ্রহী হয়।

একুশে একটি বিশেষ চেতনা যা আমাদেরকে মৌলিক মূল্য, সাহিত্য, এবং সংস্কৃতির মৌলিক মূল্যের প্রতি আত্মনির্ভর এবং আদর্শবাদী করে তুলে ধরে। এই চেতনা দেশবাসীদের মধ্যে একত্রে এবং সামাজিক বৈশিষ্ট্যে একত্রে যোগাযোগ করে তুলে ধরে এবং সমাজে পরিবর্তনে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদেরকে একজন সত্তা, মৌলিক অধিকার এবং ভাষার মৌলিকতা প্রতি আত্মনির্ভর এবং আদর্শবাদী হতে উৎসাহিত করে এবং এই চেতনা বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনীতিক উন্নতির পথে একটি মার্গদর্শক রোল পালন করে।

উপসংহারঃ 

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একুশে ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশে এক ঐতিহাসিক দিন, জাতির মধ্যে অমূল্যবান একটি চেতনা তৈরি করে। এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণভাবে উপযুক্ত হয়েছে, আমাদের জাতির ইতিহাসে এক অমূল্য চিহ্ন। এটি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্থাপন করেছে, সবার মধ্যে জাগানো সাক্ষরিক চেতনা। একুশ আমাদের কন্ঠে ভাষা দিয়েছে, হৃদয়ে দিয়েছে আবেগ, চেতনায় জাগিয়েছে দৃঢ়তা। এই দিনটি আমরা মাতৃভাষার সম্মান এবং প্রচুর ব্যবহার করে এবং ভাষা বিষয়ক জাগরুকতা বাড়াতে আগ্রহী হয়।

শেষ কথা

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের চেতনা আমাদেরকে ভাষার মৌলিক মূল্য এবং সাহিত্যিক ঐক্যের মূল্য উপজীবিত করতে উৎসাহিত করে। একুশ আমাদের কন্ঠে ভাষা দিয়েছে, হৃদয়ে দিয়েছে আবেগ, চেতনায় জাগিয়েছে দৃঢ়তা। অমর একুশের চেতনা একটি উদাহরণ, যা আমাদেরকে মৌলিক মূল্য, সাহিত্য, এবং সংস্কৃতির মৌলিক মূল্যের প্রতি আত্মনির্ভর এবং আদর্শবাদী করে তুলে ধরে। আশা করছি ১ থেকে ১০ম শ্রেণির ২০০, ৫০০ ০ ১০০০ শব্দের একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা সংগ্রহ করতে পেরেছেন।

আরও দেখুনঃ

২১ শে ফেব্রুয়ারি পোস্টার ডিজাইন 2024

একুশে ফেব্রুয়ারি কবিতা ২০২৪

২১ শে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে বক্তব্য ২০২৪