বাংলাদেশের ইতিহাসে এক স্মরণীয় দিন হচ্ছে ভাষা আন্দোলন। আজ আমরা যে বাংলা ভাষায় কথা বলি, তার জন্য আমাদের পূর্ব পুরুষেরা জীবন দিয়েছে। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান বাংলা ভাষাকে মেনে নেয়নি। তারা চেয়েছিলো পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা (আজকের বাংলাদেশ) উর্দু হবে। এই দাবিতে বাংলার ছাত্র জনতা রাস্তায় মিছিল বের করে। সেই মিছিলে পুলিশের গুলিতে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার ও শফিক সহ আরও নাম না জানা অনেকে শহিদ হয়। এর ফলে ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কবে
প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে বাংলাদেশে এবং পশ্চিমবঙ্গসহ সমস্ত বাংলাভাষী অঞ্চলে ভাষা দিবস পালন করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখে আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবস পালিত হচ্ছে। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বরে জাতিসংঘ এই দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর থেকে এই দিনে মাতৃভাষা দিবস পালন করা শুরু হয়। একে শহিদ দিবস বলা হয়। ভাষাচেতনার উন্মেষ এ ১৯৪৭ সালে রাজধানী ঢাকায় নভেম্বর-ডিসেম্বরে ভাষা-বিক্ষোভ শুরু হয়। এরপর আবারো ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে সীমিত পরিসরে আন্দোলন হয়। তারপর ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখে চরম প্রকাশ ঘটায়।
১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে মাতৃভাষা দিবস প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এই অধিবেশনে ১৮৮টি দেশ সমর্থন জানায়। তারপর থেকে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি মাতৃ ভাষা দিবস বা শহিদ দিবস পালন করা হবে।
২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
এই মাতৃ ভাষা দিবসের পিছনে অনেক ইতিহাস আছে।বাঙ্গালী সমাজে বাংলা ভাষার গুরুত্ব নিয়ে বাঙালির আত্ম-উদ্দীপনা দেখা যায় বিভাগোত্তর পূর্ববঙ্গে, সহিত ঢাকা, যেখানে ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ভাষা আন্দোলন প্রারম্ভ হয়। মার্চ ১৯৪৮ তে সীমিত পর্যায়ে আন্দোলনের অবস্থা হয় এবং ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তার চরম প্রকাশ পায়।একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদদের মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে তাদের স্মৃতির জন্য একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়, যা সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি উদ্বেগকর ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়। এই স্মৃতিস্তম্ভ দ্বারা ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বজায় রাখা হয়।
১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে, ৭ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এটি দিয়ে বাংলা ভাষার প্রচলন এবং গণমাধ্যমের ভাষা হিসেবে অধিক মৌল্য প্রাপ্ত হয়। এই ঘটনার পর বাংলা ভাষার উন্নতি হয়ে উঠে এবং ১৯৮৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে ‘বাংলা ভাষা প্রচলন বিল’ প্রণীত হয়, যা ৮ মার্চ ১৯৮৭ তারিখ থেকে কার্যকর হয়।বাংলা ভাষার অধিকার এবং মর্যাদা সম্পর্কে এই ঘটনাগুলি বাঙালি জনগণের মধ্যে একটি অমূল্য মূল্যায়ন ও আত্ম-গর্ব তৈরি করে।
২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এর স্বীকৃতি
কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙালি, রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম, বলেছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন। তারপর তারা একটি সংগঠন “মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড” তৈরি করেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী সদস্যদের সহযোগিতা করার মাধ্যমে একুশে ফেব্রুয়ারি কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে প্রচার করা শুরু করেন।
১৯৯৯ সালে, তাদের প্রয়াসের ফলে, ইউনেস্কো প্রস্তুত হয় এবং ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠানে একুশে ফেব্রুয়ারি কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর প্রতি বছরে এই দিনটি জাতিসংঘের সদস্যদেশসমূহে মর্যাদায় পালন করা হয়।
২০১০ সালের ২১ অক্টোবরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে, এখন থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হবে জাতিসংঘের সদস্যদেশসমূহের মধ্যে।এই প্রয়াসের মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপযুক্তভাবে পালন হয় এবং ভাষার প্রচার-প্রসারের মাধ্যমে ভাষার মর্যাদা ও গুরুত্ব বাড়ায়।
শেষ কথা
২১ শে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে, আমরা আমাদের ভাষার ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক মৌল্য উজ্জীবনে রক্ষা করতে প্রতিবদ্ধ। ভাষার মাধ্যমে আমরা সংসারের বিভিন্ন অংশে একত্রে আসি এবং ভাষা হলো আমাদের প্রতিষ্ঠান এবং ঐক্যের মূলনীতি। এই দিনে, আমরা সকল ভাষার সমর্থন করি এবং ভাষা বিস্তার করার উদ্দেশ্যে একটি ভিন্নমুখী সমাজের দিকে পৌঁছাতে প্রতিশ্রুতি নিয়েছি।
আরও দেখুনঃ