বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে পালন করা হয়

জাতিসংঘ সারা বিশ্বের মানবধিকার নিয়ে কাজ করেছে। প্রতি বছর একই সাথে সারা পৃথিবীতে নারী দিবস পালন করা হয়। নারী পুরুষের সমান অধিকারের পশা-পাশি নারী দিবস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে নারীকে সম্মান জানানো হয়েছে। সকল দেশে মার্চ মাসে নারী দিবস পালন করা হয়। তাহলে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে পালন করা হয়?

এটি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা অনুযায়ী গঠন করা হয়েছে। তাই অন্যান্য দেশের সাথে বাংলাদেশেও একই দিনে নারী দিবস পালন করা হয়। আর এটি হচ্ছে মার্চের ২য় সপ্তাহের প্রথম দিকে। নারী দিবস পালনের মধ্যে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের জীবন সংগ্রামের চিত্র ফুটে উঠেছে। আজকের এই নারী দিবসের পিছনে রয়েছে নানা ধরনের ইতিহাস। এই পোস্টে  নারী দিবস কবে প্রথম পালিত হয়, এর প্রতিপাদ্য বিষয় কি ও নারী দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে

সারা বিশ্বের সকল উন্নয়নের পিছনের নারীর অবদান অনেক। কিন্তু আমাদের সমাজে নারীদের কোনো সম্মানের চোখে দেওয়া হয় না। এমন অনেক দেশ আছে যেখানে নারীদের অবহেলার চোখে দেখা হয়। কিন্তু তাড়াও উন্নয়নের জন্য কাজ করে। এজন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশ্বের সকল দেশের জন্য মার্চে নারী দিবস পালনের নির্দেশ রয়েছে। ৮ মার্চ সকল দেশে নারী দিবস পালন করা হয়। নারী দিবস তাদের অধিকারের একটি অংশ। এই দিবস টি দ্বারা তাদের অধিকারকে সম্মান জানানো হয়েছে।

নারীদের কে নিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। অর্থাৎ একটি কাজের পিছিনের নারীদের সমান অবদান থাকে। নারী দিবসের সূচনা ঘটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। এরপর ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কেও আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন করা হয়েছেলো। যার ফলে ৮ই মার্চ  আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে পালন করা হয়।

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে পালন করা হয়

নারী দিবস একটি আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন এর মাধ্যমে প্রকাশ পায়। সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে নিউইয়র্কে, ডেনমার্কে নারী সম্মেলন গঠিত হয়েছিলো। নারীদের কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে সকল নারী একত্র হয়ে প্রিতিবাদ জানিয়েছিলো। এরপর ধীরে ধীরে সকল দেশের নারীরা প্রতিবাদ করতে শুরু করে। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয়।

১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৮ই মার্চ নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বেশ কয়েকটি দেশে ৮ই মার্চ নারী দিবস পালন করা শুরু হলো। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের পূর্ব থেকেই নারী দিবসের সূচনা হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশে যুদ্ধের আগেই নারী অধিকার নিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৮ই মার্চেই অন্যান্য দেশের সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে পালন করা হয়।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে প্রথম পালিত হয়

নারী অধিকারের সূচনার দিকে পুরপুরি ভাবে নারী দিবস পালনের অনুমতি ছিলোনা। নানা মিছিল, সমাবেশ ও অধিকার নিয়ে তারা রাস্তায় নেমেছিলো। তাদের এই সকল মিছিলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। করেছে। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের অধিকার নিয়ে তারা সচেতন হয়। এই সালে সকল নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম শুরু করে। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কে নারী অধিকার নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই সময়ে ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন।

তাদের এই সম্মেলনে ক্লারা ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দিয়েছিলো। তারা সিদ্ধান্ত নেয় ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে এই দিবস পালন শুরু করবে। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশ নারী দিবস পালনে অংশ নেয়। ধীরে ধীরে এর বিস্তার ঘটে। অতঃপর ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। মূলত ১৯৭৫ সাল থেকে এক যোগে সারা বিশ্বের প্রথম নারী দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের আগে থেকে এই দিবস টি পালিত হয়েছে। 

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য কী

প্রতিবছর ৮ ই মার্চতারিখ বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্‌যাপিত হয় । নারীর প্রতি সম্মান ও সমানাধিকারের জন্য এই দিবসটি উদ্‌যাপিত করা হয়। এই বছরও ৮ই মার্চে নারী দিবস পালিত হয়েছে। এটি বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের একটি জাতীয় দিবস বা আন্তর্জাতিক দিবস। এই দিনের পিছনে অনেক নারীদের তাৎপর্য ও গুরুত্ব রয়েছে। অনেক সংগ্রামের মাধ্যমে সারা বিশ্বের নারী আজকে নারী দিবসের মর্যাদা লাভ করতে পেরেছে। আমেরিকার সোশ্যালিস্ট পার্টি ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে জাতীয় নারী দিবসের আয়োজন করে।

৮ই মার্চ নারী দিবস। এটি সারা বিশ্বের নারীদের অধিকার রক্ষার্থে গঠিত হয়েছে। এই দিবসের মাধ্যমে নারীদের কে পুরুষদের মতো সম্মান জানানো হয়েছে। ১৮৫৭ সালে কর্মজীবী নারীদের শিল্প-কারখানা শ্রম সময় কমানো, মানবিক আচরণ-বিধির প্রয়োগ, শ্রম মজুরির বৈষম্য দূরীকরণসহ আরও অন্যবিধ স্বাধীনতা প্রদানকে কেন্দ্র করে নারী শ্রমিকরা রাজপথে নেমে আসে। এটি হচ্ছে তাদের প্রথম নারী অধিকার আদায়ের মানবন্ধন।

নারীর এই ন্যায্য দাবি এবং বঞ্চনার ইতিহাসে বিক্ষুব্ধ হয় বিভিন্ন দেশের নারী নেত্রীরাও। প্রতিবাদে সোচ্চার হতে থাকে বিশ্বের অসংখ্য নারী শ্রমিক। শ্রেণী বিভক্ত সমাজে মালিকানার মূল শক্তিটা যাদের হাতে থাকে তারাই সামগ্রিক উৎপাদনের নিয়ন্ত্রক হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯০৮ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে এক বিরাট সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন জার্মানির সমাজতান্ত্রিক এবং রাজনৈতিক কর্মী ক্লারা জেটকিন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। এই সমাবেশে সারা বিশ্ব থেকে প্রায়ই ১০০ জন নারী নেত্রী অংশ নিয়েছিলেন। সম্মেলন থেকে জোর দাবি জানানো হয় ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়ার। এরপর থেকে পর্যায় ক্রমে প্রতি দেশে নারী দিবসের সূচনা ঘটেছে। যার ফলে আজ সারা বিশ্বে একই সাথে নারী দিবস পালিত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস এর প্রতিপাদ্য বিষয়

নারীরা পারে না এমন কোনো কাজ নেই। তারা দেখিয়েছে কিভাবে অধিকার আদায় করে নিতে হয়। যেখানে নারী পুরুষের সমান অধিকার থাকে দরকার, সেই সমাজে নারীদের কে অবহেলা করা হয়। পুরুষদের থেকে নারীদের অধিকার কম দেওয়া হয়। ১৮৫৭ সালে কর্মজীবী নারীদের শিল্প-কারখানা শ্রম সময় কমানো, মানবিক আচরণ-বিধির প্রয়োগ, শ্রম মজুরির বৈষম্য দূরীকরণসহ আরও অন্যবিধ স্বাধীনতা প্রদানকে কেন্দ্র করে নারী শ্রমিকরা রাজপথে নেমে আসে। সেই থেকে শুরু হয় নারী অধিকারের পরিবর্তন।

সমাজে নারী ও পুরুষকে একই ভাবে দেখতে হবে। যা করিয়ে দেখিয়ে অন্যান্য বিশ্বের নারীরা। তাদের মহান উদ্বেগ এর ফলে আজ সকল নারী মুক। তারা পেয়েছে সমান অধিকার। আন্তর্জাতিক নারী দিবস এর প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে নারী পুরুষের সমতা রক্ষা করা। সারা বিশ্বে এটি পালন করা হচ্ছে। আজ নেট দুনিয়ায় নারী দিবসের বিস্তার রয়েছে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস কোনটি

অনেক আগে যখন নারী দিবস নামে কোনো দিবস ছিলো না বিশ্বের কিছু দেশ নির্ধারিত তারিখ ও মাস ছাড়া নারী দিবস পালন করেছে। কিন্তু ১৯৭৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ভাবে নারী দিবসের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। মার্চ মাসের ৮ তারিখে যে দিবস বা দিন টি পালন করা হচ্ছে তা হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। অর্থাৎ মার্চের ৮ তারিখের দিন টি হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। প্রতি বছর মার্চ মাসের ৮ তারিখেই এটি পালন করা হয়।

শেষ কথা

নারী দিবস এটি শুধু জাতীয় দিবস নয় বরং একটি আন্তর্জাতিক দিবস, যা সারা বিশ্বের একই সাথে পালিত হচ্ছে। এছাড়া এটি হচ্ছে নারীদের এক মূল্যবান দিন যা অনেক তাৎপর্যের মাধ্যমে পেয়েছে। আশা করছি বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে পালন করা হয় এবং কেনো পালন করা হয় ও এর মূল্য তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিয়েছেন।

আরও দেখুনঃ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস কবে ও কেনো পালন করা হয়