৭ মার্চের ভাষণে কয়টি দাবি ছিল ও কি কি

১৯৭১ সালের ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ দিয়েছিলেন। এই ভাষণকে ঐতিহাসিক ভাষণ বলা হয়। তার দেওয়া এই ভাষণ আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি লাভ করে। এই ভাষণ টি পরবর্তিতে ১৬ টি ভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত হয়। ভাষণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো বাঙালি জাতিকে একত্রে করা। এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু ৪ টি দাবি করেছিলো। ৭ মার্চের ভাষণে কয়টি দাবি ছিল ও কি কি ছিলো বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

৭ মার্চের ভাষণে কয়টি দাবি ছিল

৭ মার্চের ভাষণে ৪ টি দাবি ছিল। তবে বিস্তারিত ভাবে ভাষণ থেকে বুঝা যায় আরও অনেক গুলো দাবির কথা উল্লেখ পেয়েছে।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মার্চে, ঢাকার রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) অনুষ্ঠিত জনসভায়, শেখ মুজিবুর রহমান নিজের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশ) বাঙালিদেরকে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। তার এই ঐতিহাসিক ভাষণটি বিকেল ২টা ৪৫ মিনিটে শুরু হয় এবং বিকেল ৩টা ৩ মিনিটে শেষ হয়েছিল।

ভাষণটি একটি লিখিত ভাষ্য মাধ্যমে সারাদেশে প্রসারিত হয়েছিল, যা তাজউদ্দীন আহমদ কর্তৃক কিছু পরিমার্জিত হয়েছিল। এটির মূল উদ্দেশ্য ছিল সামরিক আইন প্রত্যাহার এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবীটির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা। এই ভাষণটি ১৮ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল এবং ১৩টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল, যেগুলির মধ্যে মাহাতো নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর কুড়মালি ভাষা প্রথম অনুবাদ ছিল। ২০১৭ সালে, ইউনেস্কো এই ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভাষণের প্রধান ৪ দফা দাবি গুলো হলোঃ

  • চলমান সামনিক আইন প্রত্যহার
  • সৈন্যদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া
  • গণহত্যার তদন্ত করা এবং
  • নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।

৭ই মার্চের ভাষণের দাবি কয়টি ও কি কি?

বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমান উক্ত ভাষণে ৪ টি প্রধান দাবি তুলে ধরেন। এরপরেও এই ভাষণে আরও অনেক দাবি প্রকাশ পেয়েছে।৭ই মার্চ ১৯৭১ সালে, শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণটি পাকিস্তান সরকারের অনুমতি ছাড়াই রেডিও ও টেলিভিশনে প্রচার করা হয়নি। তবে, এরপরও তৎকালীন পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এ এইচ এম সালাহউদ্দিন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক একইসঙ্গে তৎকালীন ফরিদপুর জেলার পাঁচ আসনে সংসদ সদস্য এম আবুল খায়ের ভাষণটি ধারণ করেন।

তাদের এই কাজে সহায়ক হন তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের চলচ্চিত্র বিভাগের চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা আবুল খায়ের, যারা ভাষণের ভিডিও ধারণ করেন। এছাড়াও, তাদের সঙ্গে থাকে তৎকালীন তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রযুক্তিবিদ এইচ এন খোন্দকার, যারা ভাষণের অডিও রেকর্ড করেন।

অডিও রেকর্ডটি এম আবুল খায়েরের মালিকানাধীন রেকর্ড লেবেল ঢাকা রেকর্ড বিকশিত এবং আর্কাইভ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে, এই অডিও ও ভিডিও রেকর্ডিংগুলি একটি অনুলিপি শেখ মুজিবকে হস্তান্তর করা হয়েছিল এবং অডিওর একটি অনুলিপি ভারতে পাঠানো হয়েছিল। এই সঙ্গে, অডিওর ৩০০০ অনুলিপি করে সারা বিশ্বে ভারতীয় রেকর্ড লেবেল এইচএমভি রেকর্ডস দ্বারা বিতরণ করা হয়েছিল।

৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্পষ্টভাবে ৯ টি দাবি উত্থাপন করেছিলেন। দাবিগুলো হল:

  1. বাঙালিদের অধিকার: “বাঙালির জীবন অধিকার, বাঙালির ভাষা অধিকার, বাঙালির সংস্কৃতি অধিকার।”
  2. স্বায়ত্তশাসন: “আমাদের আর কোনো দিক থেকে, কোনো ক্ষেত্রে বঞ্চিত হতে হবে না।”
  3. অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার: “আমরা চাই সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের সমান অধিকার।”
  4. শোষণমুক্তি: “আমরা চাই দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ।”
  5. শিক্ষা: “আমরা চাই শিক্ষার অধিকার।”
  6. স্বাস্থ্য: “আমরা চাই স্বাস্থ্যের অধিকার।”
  7. সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের সমান অধিকার: “আমরা চাই সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের সমান অধিকার।”
  8. নিজের ভাগ্য নির্ধারণের অধিকার: “আমরা চাই আমাদের ভাগ্য নিজেদের হাতে নিতে।”
  9. স্বাধীনতা: “এই দশ দফা আমাদের মুক্তির দশ দফা, এই দশ দফা আমাদের স্বাধীনতার দশ দফা।”

শেষ কথা

এই দাবিগুলো ছাড়াও, ভাষণে বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ৭ই মার্চের ভাষণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছিলেন। আশা করছি ৭ মার্চের ভাষণে কয়টি দাবি ছিল ও কি কি জেনে নিয়েছেন।

আরও দেখুনঃ

৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব সংক্ষেপে

৭ই মার্চের ভাষণ ২০২৪