রোজা রাখার নিয়ত ২০২৪। সেহরি ও ইফতারের দোয়া

আরবি রমজান মাসের ১ তারিখে থেকে রোজা শুরু হয়। এটি আরবিতে নবম তম মাস। রোজার আরেক নাম হচ্ছে সাওম। যার অর্থ বিরত থাকা। অর্থাৎ সকল মুসলমান রোজা পালনের মাধ্যমে দুনিয়ার পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে। ১২ মাসের মধ্যে এটি হচ্ছে গুনাহ মাপেত মাস। আল্লায় তায়ালা বলেছেন বান্দা সারা বছর গুনাহ করল, কিন্তু রমজান মাসে রোজা পালনের মাধ্যমে আমার কাছে অনুতপ্ত হলো। আমি তার সকল গুনাহ মাপ করে দিবো। রোজা পালনের জন্য সঠিক নিয়ম মানতে হবে। এজন্য আমাদের রোজা রাখার নিয়ত করে রোজা পালন করা লাগবে।

সেহরি শেষ করে একটি দোয়া পড়তে হবে এবং ইফতারের শুরুতে একটি দোয়া পড়তে হবে। এই দোয়া পড়ার মাধ্যমে রোজার রাখার নিয়ত করতে হবে। সাধারণত সেহরির পর যে দোয়া টি পড়া হয় সেটি হচ্ছে  রোজা রাখার নিয়ত। রোজা রাখতে নিয়ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা সবাই নিয়ত করার মাধ্যমে রোজা পালন করবো।  نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم এই দোয়া পড়ে রোজার নিয়ত করতে হবে।

রোজা রাখার নিয়ত

যেকোনো কাজের জন্য নিয়ত করা উত্তম। এতে করে ইচ্ছাশক্তি বৃদ্ধি পায়। নিয়ত করলে ইবাদতের উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায় এবং শরীরের শুদ্ধতা বজায়। কোনো কাজের জন্য নিয়ত করলে প্রতিবন্ধক বা অসুবিধার সম্মুখীন হলে তাকে আত্ম-নিয়ন্ত্রণে থাকতে সহায় করতে পারে।তাই রোজা রাখার জন্য প্রথমে নিয়ত করবো। কুরআনে রোজা রাখার নিয়ত উল্লেখ আছে। আরবি ভাষা না পড়তে পারায় আমরা সেগুলো বুঝিনা। তবে বাংলা ভাষায়ও রোজার নিয়ত করা যাবে। সেক্ষেত্রে উচ্চারণ সঠিক ও নির্ভুল হতে হবে। ফরজ রোজা, নফল রোজা ও কাজা রোজার জন্য আলাদা আলাদা নিয়ত আছে। সে সকল নিয়ত সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ফরজ বা রমজান মাসে রোজা রাখার নিয়তঃ নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম। এই ভাষা উচ্চারণ করতে অসুবিধা হলে সম্পূর্ণ বাংলাতে নিয়ত পড়তে পারবেন। যেমনঃ আমি আজকে রমজান মাসের রোজা রাখার নিয়ত করলাম। আপনি আমার নিয়ত কে কভুল করে নেন।

রোজা রাখার নিয়ত বাংলা

নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম। এই ভাবে বাংলাতে রোজার নিয়ত করতে হবে। তবে উচ্চারণ সঠিক ভাবে করবেন। কোনো একটি উচ্চারণ ভুল হলে, রোজার নিয়ত সঠিক ভাবে হবে না। এছাড়া নিয়তের বাংলা অর্থ বুঝে পড়লে ভালো হবে।

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

রোজা রাখার নিয়ত আরবি

সকল মুসলমানের উচিৎ কুরআন শরিফ শিখা। কেননা আল কুরআনে সকল বিষয় লেখা আছে। ভাষা না জানার কারণে আমরা সেগুলো পড়তে ও বুজতে পারি না। রোজা রাখার নিয়ত আরবিঃ نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم

কাজা রোজা রাখার নিয়ত

কাজা রোজা একটি ইসলামী পদক্ষেপ যা কিছু দোষ বা গুনাহের কারণে অস্থায়ীভাবে প্রযোজ্য হয়। এই রোজা রাখতে হয় যখন কোনো মুসলিম কিছু গুনাহ অথবা দোষ করে এবং সে দোষ বা গুনাহ থেকে মুক্তি পেতে চায়। এর মাধ্যমে মুসলিমকে তার আপন গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রাপ্ত করার এবং তার অপরাধ থেকে শুদ্ধি হাসিল করতে সাহায্য হয়। কাজা রোজার জন্য আলাদা কোনো নিয়ত নেই। সাধারণ ফরজ রোজার নিয়ত বা দোয়া পড়েই কাজা রোজার নিয়ত করা যাবে।

নফল রোজা রাখার নিয়ত

রমজান মাস ব্যাতিত যে সকল রোজা রাখা হবে, সেগুলো নফল রোজা হিসেবে গণ্য হবে। বছরের নির্দিষ্ট কয়েকটি দিন ব্যাতিত সারা মাস রোজা রাখা যাবে। তবে রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হয়েছে। তাই নফল রোজার সময় ফরজ রোজার নিয়ত পড়া যাবে না। নফল রোজা রাখার জন্য আলাদা একটি নিয়ত আছে। এই নিয়ত পড়ে নফল রোজা রাখবেন। নফল রোজা রাখার নিয়তঃ نَوَيْتُ أَنْ أَصُومَ غَدًا لِلَّهِ تَعَالَى نَفْلًا।

বাংলা উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন আছুমা গাদান লিল্লাহি তা’আলা নাফলান।

এর অর্থ আমি আগামীকাল আল্লাহ তা’আলার জন্য নফল রোজা রাখার নিয়্যত করলাম। এই নিয়ত সুবহে সাদিকের আগে যেকোনো সময় করা যেতে পারে। সেহরি শেষ করার সাথে সাথে পড়া উত্তম।

রোজা রাখার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া

সেহরির পর পর একটি নিয়ত করতে হয়। এই নিয়ত কে সেহরির নিয়োর বলে। এই নিয়তের মাধ্যমে রোজা শুরু করে। এছাড়া ইফতারের জন্যও আলাদা একটি নিয়ত আছে। এই নিয়ত পড়ার পড়ে ইফতার শুরু করবেন। এছাড়া ইফতারের জন্য দোয়াও পড়তে পারেন। রোজা রাখার নিয়ত ইতোমধ্যে উপরের অংশে দেওয়া আছে। সেহরি শুরু করতে বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারকাতিল্লাহ এই দোয়া পড়তে পারেন।

ইফতারের দোয়াঃ ইফতার শুরু পূর্বে اللَّهُمَّ إِنِّي لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ فَتَقَبَّلْ مِنِّي يَا كَرِيمُ এই দোয়া পড়বেন।

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী লাকা সুমতু ওয়া ‘আলা রিযকিকা আফতারতু ফাতাক্বব্বাল মিন্নি ইয়া কারীমু।

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি তোমার জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমার রিজিক দিয়ে ইফতার করছি। তুমি আমার রোজা কবুল কর, হে কারীম।

শেষ কথা

রোজা রাখার নিয়ম ভুল হলেও সমস্যা নেই। তবে অবশ্যই চেষ্টা করবেন সহিহ ভাবে পড়ার জন্য। এছাড়া নিয়ত গুলো জানার পাশা-পাশি এর বাংলা অর্থ গুলোও বুজে পড়বেন। এতে করে রোজা রাখার নিয়োর গুলো সব সময় মনে থাকবে। এর পাশাপাশি সেহরি ও ইফতারের দোয়া পড়ে সেহরি এবং ইফতার করবেন।

আরও দেখুনঃ

রোজা রাখার দোয়া বাংলা উচ্চারণ